বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ত্রাণ সংকটে পানিবন্দী লাখো মানুষ
- আপডেট সময় : ০১:২৭:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই ২০২০
- / ১৫০৯ বার পড়া হয়েছে
কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতিতে বেড়েই চলেছে দুর্ভোগ। ত্রাণ সংকটে রয়েছে পানিবন্দী লাখো মানুষ। এদিকে, যমুনার পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ায়, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, পাবনা ও মানিকগঞ্জে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
এক সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে দেড় লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের। বন্যা কবলিত এলাকার ঘরবাড়ী থেকে পানি না নামায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের সংকট বেড়েই চলেছে। সরকারীভাবে ত্রান তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চারণভুমি তলিয়ে থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিত মানুষেরা। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় বন্যার পানিতে ডুবে জেলায় আরো ২ শিশুসহ এ পর্যন্ত ৫ শিশু ও এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৬ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
টানা কয়েকদিন যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা অতিক্রম করে সিরাজগঞ্জ জেলা বন্যাকবলিত হওয়ার পর গত ২৪ ঘন্টায় পানি আবার কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো তা বিপদসীমার উপরে রয়েছে। ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার এবং কাজিপুর পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। তলিয়ে আছে ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের শতশত গ্রামের জমি, উঠতি ফসল, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ী। বাড়ীতে পানি উঠায় বাঁধ ও উচু জায়গায় আশ্রয় নেয়া লোকজনের খাদ্যসংকট তীব্র হয়ে উঠেছে।
এদিকে, মানিকগঞ্জের আরিচায় যমুনা পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিবালয়, ঘিওর, দৌলতপুর ও সাটুরিয়ার অভ্যন্তরীণ নদনদীর পানি বৃদ্ধিতে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পারের মানুষ।
গত ২৪ ঘন্টায় জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে সকালে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলায় ৭টি উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নের ৩১৯ গ্রামের ও ৮টি পৌরসভার ৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।
নেত্রকোণায় পানিবৃদ্ধিতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে জেলার নদ-নদীর পানি এখন বিপদসীমার নীচে রয়েছে। এদিকে, জেলা সদর ছাড়াও বারহাট্টা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১২০টি গ্রামের ৭০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘন্টায় পানি তিন সেন্টিমিটার কমলেও এখনো বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সকালে যমুনা নদীর পানি নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার মাত্র ২.৭৯ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।