বিভিন্ন স্থানে ঝড়োহাওয়া ও বৃষ্টি, সাগর-নদীতে বেড়েছে পানি
- আপডেট সময় : ০৮:২৮:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ মে ২০২০
- / ১৫০৬ বার পড়া হয়েছে
সুপার সাইক্লোন ‘আম্পানে’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলোতে বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। সাগর উত্তাল এবং অমাবশ্যার কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদ- নদীর পানি ৫ থেকে ৭ ফুট বেড়ে বহু জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে উপকূলকে ঘিরে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে লাখ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে করোণা ঝুঁকিতেও মানা সম্ভব হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব।
ঘুণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উত্তাল চট্টগ্রামের উপকুলীয় সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা। সেইসাথে শুরু হয়েছে দমকা হাওয়ার আর থেমে থেমে বৃষ্টি। এদিকে সাড়ে তিন হাজার আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ আসছে। সেখানে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি। টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। কর্ণফূলীর মোহণা বা বন্দর চ্যানেল সুরক্ষিত রাখতে সব ধরণের মাদার ভেসেলকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারে ঘূর্নিঝড় আম্মান ও অমাবশ্যার জোয়ারে উত্তাল সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬/৭ ফুট বেশি। ভোর ৫টা থেকে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। দূর্যোগ মোকাবেলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সব ধরনের প্রস্তুতির পাশাপাশি বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে।
বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করছে খুলনাঞ্চল জুড়। বৃষ্টির সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। সময় গড়ানোর সাথে সাথেই বাড়ছে বাতাসের তীব্রতা। নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে মোংলা বন্দরসহ আশপাশের নদীর নৌযানগুলোকে। খুলনার ৬২৯ টি সাইক্লোন শেল্টারে দুপুর অব্দি ৫৪ হাজার ৫৫৯ জন আশ্রয় নিয়েছে। তবে ঘরের মালামাল ও গবাদি পশু রেখে সাইক্লোন শেল্টারে যেতে আগ্রহী হচ্ছে না অনেকে। সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী চিকিৎসা কার্যক্রমের জন্য ১১৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
আম্পান আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা, মোরলগঞ্জ ও মোংলার মানুষ। করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি সত্ত্বেও আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকে একসাথে থেকেছে। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয় প্লাবিত হওয়া আর ঝড় আতঙ্ক নিয়ে নিজ বাড়িতে অনেকে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদে রাখা হয়েছে ১৫ হাজার গবাদিপশু।
সাতক্ষীরার উপকূলে উত্তাল নদ-নদী। একই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ঝড় হাওয়া ও জোয়ারের পানি। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭০ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১০ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয় কেন্দ্রে। আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়িতে চলে যাওয়া মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান বিভাগীয় কমিশনার ও ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর উপ-পরিচালক।
পটুয়াখালী জেলা-উপজেলায় বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাস বইছে। সাগর উত্তাল। স্থানীয় নদ-নদীর পানি বেড়েছে। ফলে প্লাবিত হতে শুরু করেছে জেলার নিন্মাঞ্চল।
নোয়াখালীতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহন করেছে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। আশ্রয় কেন্দ্রে অনেককে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঝালকাঠিতে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
বরগুনায় থেমে থেমে বৃষ্টি আর দমকা হাওয়া বইছে। প্রধান ৩টি নদীতে বৃদ্ধি পেয়েছে ৭ফুট পানি। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। ১৬৮টি সাইক্লোন শেল্টারের সাথে যুক্ত করা হয়েছে ৩৪১টি স্কুল এবং ১০১টি ভবন। দুর্যোগ মোকাবিলার ২০০ মে.টন চাল ও ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজারে দমকা ঝড়ো হাওয়া ও থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঘুর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি জরুরী সভা করেছে।
১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকা চাঁদপুরে দুর্যোগ মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলার চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব উত্তর উপজেলার চরাঞ্চলের ১৮টি ইউনিয়নে সতর্কতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে ইতমধ্যে নদী তীরবর্তী ১২ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বাড়তি প্রবাহিত হচ্ছে।