০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪

ছাদের টালি যখন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৫:২৮:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩
  • / ১৬১১ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জ্বালানি সংকট, মূল্যবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে শুধু পরিবহণ ক্ষেত্রে নয়, দৈনন্দিন জীবনে সব ক্ষেত্রেই জ্বালানি সাশ্রয়ের তাগিদ বাড়ছে৷ জার্মানির এক উদ্যোগপতি এক অভিনব উপায়ে সেই কাজে অবদান রাখছেন৷

জার্মানির বাড়িঘরের ছাদের উপর বিপ্লব আসতে চলেছে৷ কর্নেলিউস পাউল একেবারে নতুন ধরনের টাইল সৃষ্টি করেছেন, যেগুলি একই সঙ্গে সোলার মডিউলও বটে৷ তাছাড়া সাধারণ টালির মতো সেগুলি ভবনের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে৷

সেই টাইল দিয়ে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়৷ যতক্ষণ সূর্যের আলো থাকে, তত সময় ধরে এক পরিবারের চাহিদার তুলনায় বরং বেশি বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়৷ সোলার টাইলের উদ্ভাবক কর্নেলিউস পাউল বলেন, ‘‘আমরা সহজ হিসেব করতে পারি৷ ছাদের উপর এক হাজার টাইলের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দশ কিলোওয়াট৷ জার্মানির কোনো জায়গায় বছরে প্রায় ৯,০০০ কিলোওয়াট আওয়ার, কোথাও বা দশ হাজার কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে৷ অন্য বিষয়টি হলো, প্রায় ২০ বছরে সেই টাইল কেনা ও বসানোর ব্যয় উঠে আসার কথা৷”

এই ভবনে সোলার টাইল বসাতে প্রায় ৪০,০০০ ইউরো ব্যয় হয়েছে৷ সাধারণ ছাদের উপর আলাদা করে সোলার প্যানেল বসানোর ব্যয়ের তুলনায় সেই অংক বেশ কয়েক হাজার ইউরো বেশি৷

পথিকৃত হিসেবে বিপ্লবীদের সব সময়ে সমস্যার মুখে পড়তে হয়৷ তাঁর উদ্ভাবনী টাইল উৎপাদনের জন্য এখনো হাতে করে অনেক কাজ করতে হয়৷ ফলে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদনের ব্যয়ও বেড়ে যায়৷

আরেকটি বাধা হলো, তাঁর নতুন পণ্যকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হতে হবে, যাতে কয়েক দশক ধরে বিঘ্ন ছাড়াই টাইল মজবুত থাকতে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যেতে পারে৷ কর্নেলিউস বলেন, ‘‘সোলার মডিউল, তার উপরের সোলার ল্যামিনেট প্রথাগত প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়৷ এই শিল্পক্ষেত্র কোটি কোটি বার সেগুলি হাতেনাতে যাচাই করেছে৷ উপাদান হিসেবে পরীক্ষিত হওয়ায় আমার মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই৷”

সম্প্রতি রোবটও কাজে লাগানো হচ্ছে৷ ফলে কর্নেলিউস আরও বেশি পরিমাণে এবং আরো সস্তায় উৎপাদন করতে পারছেন৷ দামী সরঞ্জাম কেনার সামর্থ্য নিশ্চিত করতে তিনি বিনিয়োগকারীদের নিজের কোম্পানির অংশীদার করেছেন৷ এভাবে নতুন কোম্পানির প্রতি আস্থা আদায় করতে পেরেছেন তিনি৷ কর্নেলিউস পাউল বলেন, ‘‘২০১১ সালে আমরা মাত্র তিন জনকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম৷ এখন প্রায় ৭০ জন কর্মী সক্রিয় রয়েছেন৷ গত বছর আমাদের টার্নওভার দ্বিগুণ হয়ে ৫০ লাখ ছুঁয়েছে৷ চলতি বছর আমরা সেটা পাঁচ বা ছয় গুণ করতে চাই৷”

জ্বালানি সংকটের কারণে জার্মানির অনেক বাসার মালিকের মনে নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদনের তাগিদ বাড়ছে বলে উদ্যোগপতি হিসেবে কর্নেলিউস সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ সেইসঙ্গে সম্প্রতি এমন উদ্যোগের জন্য আরও মোটা অংকের রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে, যে ক্ষেত্রে বেশি জটিলতা ছাড়াই ভবনের রূপান্তর ঘটানো যায়৷ একটি ভবনের সংস্কারের বর্ণনা দিয়ে কর্নেলিউস বলেন, ‘‘ছাদে কয়েকটি জায়গায় গর্ত করা হচ্ছে৷ সেখান দিয়ে প্লাস ও মাইনাস কেবেল ঢোকানো হবে৷ সেই তার কেবেল চ্যানেলের মাধ্যমে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেখানে ইনভার্টার রয়েছে৷”

কোটি কোটি ইউরো অংকের বাজারে এই ‘টাইল বিপ্লবী’ এখনো ছোট আকারে ব্যবসা করছেন৷ তবে কোনো এক সময়ে তাঁর সোলার টাইল জার্মানিতে বড় আকারে বিক্রি হবে বলে তিনি নিশ্চিত৷ কর্নেলিউস পাউল মনে করেন, ‘‘জার্মানিতে দেড় কোটি এমন বাড়ি রয়েছে, যেখানে একটি বা দুটি পরিবার বাস করে এবং আগামী ৩০ বছরের মধ্যে যেগুলির জ্বালানি কাঠামোর সংস্কার করতে হবে৷ হয়তো ছাদও খুব পুরানো হয়ে গেছে৷ সেই হিসেব অনুযায়ী বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ছাদের সংস্কার, অর্থাৎ ২০ থেকে ৩০ কোটি সোলার টাইল সেখানে লাগানো হতে পারে৷ আমরা সেই ধরনের কাজের মাধ্যমে সে ক্ষেত্রে অবদান রাখার আশা করছি৷”

জার্মানির মানুষ কিন্তু সাধারণত মূল্যের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন৷ ফলে তাদের মন জয় করা কঠিন হবে৷ কিন্তু আপাতত যুগের হাওয়া তাঁর জন্য সুবিধা বয়ে আনছে৷ টাইলের কার্যকরিতা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সম্ভবত আরও ক্রেতা পাওয়া যাবে৷

ডয়চে ভেলে

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ছাদের টালি যখন সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করে

আপডেট সময় : ০৫:২৮:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ জুন ২০২৩

জ্বালানি সংকট, মূল্যবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে শুধু পরিবহণ ক্ষেত্রে নয়, দৈনন্দিন জীবনে সব ক্ষেত্রেই জ্বালানি সাশ্রয়ের তাগিদ বাড়ছে৷ জার্মানির এক উদ্যোগপতি এক অভিনব উপায়ে সেই কাজে অবদান রাখছেন৷

জার্মানির বাড়িঘরের ছাদের উপর বিপ্লব আসতে চলেছে৷ কর্নেলিউস পাউল একেবারে নতুন ধরনের টাইল সৃষ্টি করেছেন, যেগুলি একই সঙ্গে সোলার মডিউলও বটে৷ তাছাড়া সাধারণ টালির মতো সেগুলি ভবনের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে৷

সেই টাইল দিয়ে অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়৷ যতক্ষণ সূর্যের আলো থাকে, তত সময় ধরে এক পরিবারের চাহিদার তুলনায় বরং বেশি বিদ্যুৎ সৃষ্টি হয়৷ সোলার টাইলের উদ্ভাবক কর্নেলিউস পাউল বলেন, ‘‘আমরা সহজ হিসেব করতে পারি৷ ছাদের উপর এক হাজার টাইলের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দশ কিলোওয়াট৷ জার্মানির কোনো জায়গায় বছরে প্রায় ৯,০০০ কিলোওয়াট আওয়ার, কোথাও বা দশ হাজার কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে৷ অন্য বিষয়টি হলো, প্রায় ২০ বছরে সেই টাইল কেনা ও বসানোর ব্যয় উঠে আসার কথা৷”

এই ভবনে সোলার টাইল বসাতে প্রায় ৪০,০০০ ইউরো ব্যয় হয়েছে৷ সাধারণ ছাদের উপর আলাদা করে সোলার প্যানেল বসানোর ব্যয়ের তুলনায় সেই অংক বেশ কয়েক হাজার ইউরো বেশি৷

পথিকৃত হিসেবে বিপ্লবীদের সব সময়ে সমস্যার মুখে পড়তে হয়৷ তাঁর উদ্ভাবনী টাইল উৎপাদনের জন্য এখনো হাতে করে অনেক কাজ করতে হয়৷ ফলে জার্মানির পূর্বাঞ্চলে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদনের ব্যয়ও বেড়ে যায়৷

আরেকটি বাধা হলো, তাঁর নতুন পণ্যকে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য হতে হবে, যাতে কয়েক দশক ধরে বিঘ্ন ছাড়াই টাইল মজবুত থাকতে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চালিয়ে যেতে পারে৷ কর্নেলিউস বলেন, ‘‘সোলার মডিউল, তার উপরের সোলার ল্যামিনেট প্রথাগত প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয়৷ এই শিল্পক্ষেত্র কোটি কোটি বার সেগুলি হাতেনাতে যাচাই করেছে৷ উপাদান হিসেবে পরীক্ষিত হওয়ায় আমার মনে কোনো দুশ্চিন্তা নেই৷”

সম্প্রতি রোবটও কাজে লাগানো হচ্ছে৷ ফলে কর্নেলিউস আরও বেশি পরিমাণে এবং আরো সস্তায় উৎপাদন করতে পারছেন৷ দামী সরঞ্জাম কেনার সামর্থ্য নিশ্চিত করতে তিনি বিনিয়োগকারীদের নিজের কোম্পানির অংশীদার করেছেন৷ এভাবে নতুন কোম্পানির প্রতি আস্থা আদায় করতে পেরেছেন তিনি৷ কর্নেলিউস পাউল বলেন, ‘‘২০১১ সালে আমরা মাত্র তিন জনকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম৷ এখন প্রায় ৭০ জন কর্মী সক্রিয় রয়েছেন৷ গত বছর আমাদের টার্নওভার দ্বিগুণ হয়ে ৫০ লাখ ছুঁয়েছে৷ চলতি বছর আমরা সেটা পাঁচ বা ছয় গুণ করতে চাই৷”

জ্বালানি সংকটের কারণে জার্মানির অনেক বাসার মালিকের মনে নিজস্ব জ্বালানি উৎপাদনের তাগিদ বাড়ছে বলে উদ্যোগপতি হিসেবে কর্নেলিউস সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন৷ সেইসঙ্গে সম্প্রতি এমন উদ্যোগের জন্য আরও মোটা অংকের রাষ্ট্রীয় সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে, যে ক্ষেত্রে বেশি জটিলতা ছাড়াই ভবনের রূপান্তর ঘটানো যায়৷ একটি ভবনের সংস্কারের বর্ণনা দিয়ে কর্নেলিউস বলেন, ‘‘ছাদে কয়েকটি জায়গায় গর্ত করা হচ্ছে৷ সেখান দিয়ে প্লাস ও মাইনাস কেবেল ঢোকানো হবে৷ সেই তার কেবেল চ্যানেলের মাধ্যমে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যেখানে ইনভার্টার রয়েছে৷”

কোটি কোটি ইউরো অংকের বাজারে এই ‘টাইল বিপ্লবী’ এখনো ছোট আকারে ব্যবসা করছেন৷ তবে কোনো এক সময়ে তাঁর সোলার টাইল জার্মানিতে বড় আকারে বিক্রি হবে বলে তিনি নিশ্চিত৷ কর্নেলিউস পাউল মনে করেন, ‘‘জার্মানিতে দেড় কোটি এমন বাড়ি রয়েছে, যেখানে একটি বা দুটি পরিবার বাস করে এবং আগামী ৩০ বছরের মধ্যে যেগুলির জ্বালানি কাঠামোর সংস্কার করতে হবে৷ হয়তো ছাদও খুব পুরানো হয়ে গেছে৷ সেই হিসেব অনুযায়ী বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ছাদের সংস্কার, অর্থাৎ ২০ থেকে ৩০ কোটি সোলার টাইল সেখানে লাগানো হতে পারে৷ আমরা সেই ধরনের কাজের মাধ্যমে সে ক্ষেত্রে অবদান রাখার আশা করছি৷”

জার্মানির মানুষ কিন্তু সাধারণত মূল্যের বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন৷ ফলে তাদের মন জয় করা কঠিন হবে৷ কিন্তু আপাতত যুগের হাওয়া তাঁর জন্য সুবিধা বয়ে আনছে৷ টাইলের কার্যকরিতা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়লে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সম্ভবত আরও ক্রেতা পাওয়া যাবে৷

ডয়চে ভেলে