দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি, প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা
- আপডেট সময় : ১২:৩৫:০৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই ২০২০
- / ১৫০৫ বার পড়া হয়েছে
কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, মাদারীপুর, লালমনিরহাট ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সব নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা।
কুড়িগ্রামে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামে ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৮৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ৮১ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার ৯টি উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে পাকা সড়ক, উঁচু বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার ত্রাণ বিভাগ থেকে ১৬০ টন চাল, ৮ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ হলেও তা এখনও বিতরণ শুরু হয়নি।
ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর টানা ভারী বর্ষণে জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ৪৩ সেন্টিমিটার বেড়ে সকালে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
লালমনিরহাটে তিস্তার পানি কিছুটা কমলেও ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উন্নতি হয়নি বন্যা পরিস্থিতির। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সকাল থেকে তিস্তার পানি ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও ধরলার পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে টানা ৪ দিন ধরে পানিবন্দী হয়ে আছে লক্ষাধিক মানুষ।
উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় ঢলের সাথে টানা বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টে আরও ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে আবার বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে কাজিপুর পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সব কটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২৬ ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামের এক লাখ ৪৬ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
টানা বর্ষন ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোণায় বন্যা দেখা দিয়েছে। সকালে কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে জেলার বিভিন্ন নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ১০ উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে কলমাকান্দা উপজেলা।
পাবনায় কয়েক দিন পানি কমলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে পদ্মা, যমুনাসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সকালে যমুনা নদীর পানি নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপদ সীমার মাত্র ০.১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদ সীমার মাত্র ১.৬৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মানিকগঞ্জে যমুনা নদীর পানি জেলার আরিচা পয়েন্টে সকালে আগের ২৪ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যমুনা ও পদ্মা নদী ছাড়াও জেলার গাজীখালী, ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গাসহ অভ্যন্তরীণ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মানদী বেষ্টিত বিস্তৃর্ণ জনপদ তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকট আকারে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে পদ্মায়। নদী ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় কয়েক শতাধিক পরিবার।