১১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

অভিবাসন বিতর্কে নেদারল্যান্ডসের জোট সরকারের পতন

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৪:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
  • / ১৬০৩ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অভিবাসন ও আশ্রয় ইস্যুতে মতবিরোধের জের ধরে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দেড় বছরের মাথায় পতন হলো নেদারল্যান্ডসের চারদলীয় জোট সরকারের৷

মতবিরোধ দূর করে সরকার বাঁচাতে শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে-এর সভাপতিত্বে চার পক্ষ বৈঠকে বসলেও কোনো সমঝোতা ছাড়াই তা শেষ হয়৷

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন নেদারল্যান্ডসকে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী রুটে৷

তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, আজকে সন্ধ্যায় আমরা একটি সিদ্ধান্ত উপনীত হতে পেরেছি, সেটা হলো আমাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধ দূর করা সম্ভব নয়৷ আর তাই আমি খুব দ্রুত সরকারের পক্ষ হয়ে রাজার কাছে আমার লিখিত পদত্যাগ জমা দেব৷”

শনিবার রাজা ভিলেম আলেকজান্দারের কাছে তিনি পদত্যাগ জমা দিতে পারেন বলে জানা গেছে৷ আর নতুন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা কাজ চালিয়ে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি৷

গত বছর আশ্রয়শিবিরগুলোতে উপচে পড়া ভিড় নিয়ে হৈচৈ হওয়ার পর রুটে-এর রক্ষণশীল ভিভিডি পার্টি শরণার্থীদের আগমন সীমিত করার চেষ্টা করে আসছে৷ কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের দুই অংশীদার রুটের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছিলেন শুরু থেকে৷

বিরোধের কারণ

মূলত অভিবাসন ইস্যুতে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন জোট সরকারের অংশীদারেরা৷ সরকারের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিলেন ডানপন্থি ভিভিডি পার্টির নেতা রুটে৷

২০২২ সালে অভিবাসী আশ্রয়শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় আবাসন সংকটে পড়তে হয়েছিল সরকারকে৷ তখন আশ্রয়প্রার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলনকে সীমিত করার চেষ্টা করেছিলেন রুটে৷ দেশটিতে আশ্রয় নেয়া যুদ্ধ শরণার্থীদের আত্মীয়স্বজনদের পুনর্মিলন ভিসায় নেদারল্যান্ডসে আসা কমাতে প্রতিমাসে ২০০ জনে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেন তিনি৷ আর এ প্রস্তাব মানা না হলে সরকারের পতনের হুমকিও দেন জোটের শরিকদের৷

জোট সরকারের দুই শরিক ক্রিস্টেন ইউনি ও ডি৬৬ এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে৷ কারণ, তারা মনে করে এভাবে সংকটের সমাধান হয় না৷

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেয়া জোট সরকার সংকট কাটাতে বুধ এবং বৃহস্পতিবারও আলোচনা করেছিল৷ সবশেষ শুক্রবার রুটে নিজেও চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি৷

ক্রিশ্চিয়ান ইউনির মুখপাত্র টিম কায়েস্তে বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে না বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷

ডাচ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে আর লুকানোর কিছু নেই যে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল৷”

মাত্র দেড় বছরের মাথায় সরকারের পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটিই খুবই দুঃখজনক, কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা৷”

নেদারল্যান্ডসে আশ্রয় আবেদন গত বছর এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ দেখা গেছে, দেশটিতে গেল বছর ৪৬ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা হয়েছে৷ সরকারের ধারণা, চলতি বছর সেই সংখ্যাটি ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে৷ আর এই ধারণা সত্য হলে তা ২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটের সময়কেও ছাড়িয়ে যাবে৷

কী হতে যাচ্ছে?

সূচি অনুযায়ী এই সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করলে ২০২৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এখন তার আগেই নির্বাচন হবে৷

বিরোধীদলগুলো এরমধ্যেই দ্রুত নির্বাচন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন৷ শুক্রবার রাতে কট্টর অভিবাসন বিরোধী দল পিভিভির নেতা গির্ট ভিল্ডারস দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে টুইট করেছেন৷

গ্রিন লেফট পার্টির নেতা জেসি ক্লেভারও নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷ ডাচ সম্প্রচার কেন্দ্র এনওএসকে তিনি বলেছেন, ‘‘এই দেশটির দিক পরিবর্তন দরকার৷”

এমনও হতে পারে, দেশটির রাজা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে জোট গঠন করে সরকার পরিচালনার কথা বলতে পারেন৷ কিন্তু নানা হিসাব নিকাশের কারণে সেটা এক প্রকার অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে৷ কারণ, ২০২১ সালের ভোটে কোনো রাজনৈতিক দলই এককভাবে ভালো ফল করতে পারেনি৷ ফলে জোট করে সরকার গঠন করতেই চলে যায় নয় মাস৷

রুটে-এর দল ভিভিডি সবচেয়ে বেশি, ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ আর দুটি দলের ১০ শতাংশের ওপরে ভোট ছিল৷ আরো ১৭টি রাজনৈতিক দল পার্লামেন্টে একটি করে আসন পেয়েছিল৷ ফলে, ভেঙে যাওয়া জোটকে বাদ দিলে, অন্যদের নিয়ে নতুন করে জোট সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই৷

নতুন নির্বাচন দেয়া হলেও দল টানা পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারবেন বলে আশা করেন মার্ক রুটে৷ শিশুদের যত্নআত্তি সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে ২০২১ সালে তার সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল৷ কিন্তু তারপরের নির্বাচনেও রুটে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন৷

ডয়চে ভেলে

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

অভিবাসন বিতর্কে নেদারল্যান্ডসের জোট সরকারের পতন

আপডেট সময় : ০৪:২৩:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩

অভিবাসন ও আশ্রয় ইস্যুতে মতবিরোধের জের ধরে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র দেড় বছরের মাথায় পতন হলো নেদারল্যান্ডসের চারদলীয় জোট সরকারের৷

মতবিরোধ দূর করে সরকার বাঁচাতে শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে-এর সভাপতিত্বে চার পক্ষ বৈঠকে বসলেও কোনো সমঝোতা ছাড়াই তা শেষ হয়৷

বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করেন নেদারল্যান্ডসকে দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্ব দিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রী রুটে৷

তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, আজকে সন্ধ্যায় আমরা একটি সিদ্ধান্ত উপনীত হতে পেরেছি, সেটা হলো আমাদের মধ্যে চলমান মতবিরোধ দূর করা সম্ভব নয়৷ আর তাই আমি খুব দ্রুত সরকারের পক্ষ হয়ে রাজার কাছে আমার লিখিত পদত্যাগ জমা দেব৷”

শনিবার রাজা ভিলেম আলেকজান্দারের কাছে তিনি পদত্যাগ জমা দিতে পারেন বলে জানা গেছে৷ আর নতুন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা কাজ চালিয়ে যাবেন বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি৷

গত বছর আশ্রয়শিবিরগুলোতে উপচে পড়া ভিড় নিয়ে হৈচৈ হওয়ার পর রুটে-এর রক্ষণশীল ভিভিডি পার্টি শরণার্থীদের আগমন সীমিত করার চেষ্টা করে আসছে৷ কিন্তু চারদলীয় জোট সরকারের দুই অংশীদার রুটের পরিকল্পনার বিরোধিতা করে আসছিলেন শুরু থেকে৷

বিরোধের কারণ

মূলত অভিবাসন ইস্যুতে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন জোট সরকারের অংশীদারেরা৷ সরকারের সবচেয়ে বড় অংশীদার ছিলেন ডানপন্থি ভিভিডি পার্টির নেতা রুটে৷

২০২২ সালে অভিবাসী আশ্রয়শিবিরগুলো পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় আবাসন সংকটে পড়তে হয়েছিল সরকারকে৷ তখন আশ্রয়প্রার্থীদের পারিবারিক পুনর্মিলনকে সীমিত করার চেষ্টা করেছিলেন রুটে৷ দেশটিতে আশ্রয় নেয়া যুদ্ধ শরণার্থীদের আত্মীয়স্বজনদের পুনর্মিলন ভিসায় নেদারল্যান্ডসে আসা কমাতে প্রতিমাসে ২০০ জনে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেন তিনি৷ আর এ প্রস্তাব মানা না হলে সরকারের পতনের হুমকিও দেন জোটের শরিকদের৷

জোট সরকারের দুই শরিক ক্রিস্টেন ইউনি ও ডি৬৬ এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে৷ কারণ, তারা মনে করে এভাবে সংকটের সমাধান হয় না৷

২০২২ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা নেয়া জোট সরকার সংকট কাটাতে বুধ এবং বৃহস্পতিবারও আলোচনা করেছিল৷ সবশেষ শুক্রবার রুটে নিজেও চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি৷

ক্রিশ্চিয়ান ইউনির মুখপাত্র টিম কায়েস্তে বলেছেন, অভিবাসন নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারবে না বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷

ডাচ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে আর লুকানোর কিছু নেই যে আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য ছিল৷”

মাত্র দেড় বছরের মাথায় সরকারের পতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটিই খুবই দুঃখজনক, কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা৷”

নেদারল্যান্ডসে আশ্রয় আবেদন গত বছর এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ দেখা গেছে, দেশটিতে গেল বছর ৪৬ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা হয়েছে৷ সরকারের ধারণা, চলতি বছর সেই সংখ্যাটি ৭০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে৷ আর এই ধারণা সত্য হলে তা ২০১৫ সালের অভিবাসন সংকটের সময়কেও ছাড়িয়ে যাবে৷

কী হতে যাচ্ছে?

সূচি অনুযায়ী এই সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করলে ২০২৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এখন তার আগেই নির্বাচন হবে৷

বিরোধীদলগুলো এরমধ্যেই দ্রুত নির্বাচন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন৷ শুক্রবার রাতে কট্টর অভিবাসন বিরোধী দল পিভিভির নেতা গির্ট ভিল্ডারস দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে টুইট করেছেন৷

গ্রিন লেফট পার্টির নেতা জেসি ক্লেভারও নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷ ডাচ সম্প্রচার কেন্দ্র এনওএসকে তিনি বলেছেন, ‘‘এই দেশটির দিক পরিবর্তন দরকার৷”

এমনও হতে পারে, দেশটির রাজা অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে জোট গঠন করে সরকার পরিচালনার কথা বলতে পারেন৷ কিন্তু নানা হিসাব নিকাশের কারণে সেটা এক প্রকার অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে৷ কারণ, ২০২১ সালের ভোটে কোনো রাজনৈতিক দলই এককভাবে ভালো ফল করতে পারেনি৷ ফলে জোট করে সরকার গঠন করতেই চলে যায় নয় মাস৷

রুটে-এর দল ভিভিডি সবচেয়ে বেশি, ২২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল৷ আর দুটি দলের ১০ শতাংশের ওপরে ভোট ছিল৷ আরো ১৭টি রাজনৈতিক দল পার্লামেন্টে একটি করে আসন পেয়েছিল৷ ফলে, ভেঙে যাওয়া জোটকে বাদ দিলে, অন্যদের নিয়ে নতুন করে জোট সরকার গঠনের কোনো সুযোগ নেই৷

নতুন নির্বাচন দেয়া হলেও দল টানা পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে পারবেন বলে আশা করেন মার্ক রুটে৷ শিশুদের যত্নআত্তি সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে ২০২১ সালে তার সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল৷ কিন্তু তারপরের নির্বাচনেও রুটে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন৷

ডয়চে ভেলে