বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত হলো
- আপডেট সময় : ০৭:৪২:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
- / ১৫০৫ বার পড়া হয়েছে
সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আবারও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ। ঢাকায় বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্তানা সীমান্ত হত্যা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে দায়ী করেন। কেউ অবৈধভাবে বর্ডার ক্রস করে ভারতীয় সীমানায় ঢুকলেই বিএসএফ এটি সন্ত্রাসী কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে ঘটেছে বলে ধরে নেয়। আর বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাফিনুল ইসলাম জানান, এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে সীমান্তে শিগগিরই যৌথ টহল শুরু করবে দু’দেশের সীমান্ত বাহিনী। সকালে ঢাকার পিলখানায় বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৩ দিনের সীমান্ত সম্মেলন শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তারা। এ সময় সীমান্তে যে কোন ইস্যুতে মানবাধিকারের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়ার কথাও জানান তারা।
ভারত-বাংলাদেশের পাঁচ দশকের বন্ধুত্বের মধ্যেও অন্যতম অমীমাংসিত বিষয়- সীমান্ত হত্যা। ২০১৫ সালের পর কিছুটা কমলেও ২০১৯ সালে তা বেড়ে আবার তিনগুণ হয়ে যায়। গত জানুয়ারি মাসেই ১২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে বিএসএফ। এমনকি করোনাকালেও থামেনি সীমান্ত হত্যা। আগস্ট পর্যন্ত ৩৪ বাংলাদেশীকে হত্যা করা হয়েছে। যা সারাবিশ্বে বিরল ঘটনা।
এমন পরিস্থিতিতে দু’দেশের সীমান্ত বাহিনীর ৫০তম যৌথ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো ঢাকার পিলখানায়। এতে সীমান্তে অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচারসহ যে কোনো বিষয়ে মানবাধিকারকে প্রাধান্য দিতে একমত হয় দু’দেশের বাহিনী।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন দুই বাহিনী প্রধান। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যাকে অপ্রত্যাশিত উল্লেখ করে বিএসএফ প্রধান বরাবরের মতোই আবারো আশ্বাস দেন সীমান্ত হত্যা শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে।সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে বিজিবির সাথে বিএসএফের প্রতিনিয়ত আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে প্রাণঘাতী নয় এমন অস্ত্র ব্যবহারে ভারত সরকারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। একেবারে প্রাণ সংশয়ে না পড়লে মারণাস্ত্র ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। আর সন্ত্রাসীদের গতিবিধি নজরদারি করতে দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ।
এবারের সম্মেলনের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে সকল ধরনের অপরাধ কমাতে দ্রুতই যৌথ অভিযান শুরু করবে দুই বাহিনী।বেশিরভাগ চোরাচালান ও হত্যার ঘটনাই রাতে ঘটে। কেউ অবৈধভাবে বর্ডার ক্রস করে ভারতীয় সীমানায় ঢুকলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তবে এসব প্রতিরোধে আবারও সীমান্তে দু’দেশের যৌথ টহল শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাদক চোরাচালানের বিষয়ে উভয় দেশই তথ্য আদান-প্রদান করে তা প্রতিরোধে কাজ করবে ।
অপরাধীদের কোনো দেশ নেই জানিয়ে দুই প্রধান বলেন, দু’পাশেই দুই বাহিনীর অবস্থান। কেউ ছাড় পাবে না।
রাকেশ আস্তানা, মহাপরিচালক, বিএসএফ বলেন- প্রায় ৭০ ভাগ মৃত্যুই রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে ঘটে। এ সময় নানা ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটে বলে সন্ত্রাসীদেরও বিএসএফ চ্যালেঞ্জ করে। তাছাড়া রাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকে না এবং সবকিছু দৃশ্যমানও থাকে না। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত বিএসএফ সদস্য বিভিন্ন আক্রমণে আহত হয়েছেন। বিএসএফ সদস্যরা আক্রান্ত না হলে গুলী ছোঁড়ে না ।
অন্যদিকে, মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম, মহাপরিচালক, বিজিবি বলেন- ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় যৌথ টহল পরিচালনাসহ সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ এবং সীমান্ত গ্রামে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন করা হবে ।
বিএসএফ মহাপরিচালক সন্দেহভাজন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিজিবিসহ বাংলাদেশের অন্যান্য বাহিনীর পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। পাশাপাশি ৮ বাংলাদেশী বন্দীকে দ্রুত ফিরিয়ে দিতে সম্মত হন। নভেম্বরে বিজিবি-বিএসফের পরবর্তী সম্মেলন হবে ভারতে।