নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
- আপডেট সময় : ০১:২৮:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জুলাই ২০২০
- / ১৫১৭ বার পড়া হয়েছে
কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, মাদারীপুর, লালমনিরহাট ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সব নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৯ উপজেলার আড়াই শতাধিক চর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট চরম আকার ধারন করেছে। কাঁচা পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত আছে। গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ৩০ সেন্টিমিটার বেড়ে গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়ার পয়েন্টে ২৪ ঘন্টায় ৩৭ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলার পানি কমে যাওয়ায় উন্নতি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জনায়, সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে নদীর পানি কমতে থাকায় প্লাবিত এলাকাগুলোর বাড়ি ঘর থেকে পানি নামতে শুরু করলেও দূররভোগ কমেনি দূর্গত এলাকার মানুষজনের। রাস্তাঘাট নষ্ট হওয়ায় স্বাভাবিক হয়নি যোগাযোগ ব্যবস্থা।
গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৩১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার সকাল ৬ টায় বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং একই সময় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধের হার্ডপয়েন্ট ৩৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন নদীতীরবর্তী আরও নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
উজান থেকে ধেয়ে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা ভারী বর্ষণে জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। জেলার ৭ উপজেলায় ৩৯ টি ইউনিয়নের প্রায় সারে ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার বেড়ে আজ সকালে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা দূর্গত এলাকায় চিকিৎসা সেবা দিতে ৩৯টি মেডিক্যাল টিম কাজ করেছে।
গত ২৪ ঘন্টায় পানি ৩৭ সেন্টিমিটার বেড়ে সকাল ৬টায় সারিয়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বসতবাড়ী, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজন ভোগান্তিতে পড়েছে। ভয়াবহ পানিতে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধও ঝুকির মধ্যে রয়েছে। এতে আশ্রয় নেয়া লোকজন ও বাঁধের ভাটি এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মানিকগঞ্জে যমুনা নদীর শিবালয়ের আরিচা পয়েন্টে ২৪ ঘন্টায় সকালে ৪৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপদসমীর ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার ৭টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বোনা আমন, আউশ, ঢেরশ, মরিচসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেতে বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ ভাঙ্গন ঝূকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। নদীতে বিলীন হয়েছে অস্থায়ী বাধের প্রায় ৩০ মিটার। এছাড়াও ভাঙ্গন ঝূকিতে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ তলা ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, একটি বাজারসহ বিস্তৃর্ন জনপদ।
ফরিদপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে তা এখন বিপদ সীমার ৫৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল, চর মাধদিয়াও ডিক্রির চর ইউনিয়নেরবেশ কয়েকটি রাস্তা তলিয়ে গেছে।
দিনাজপুরের পুনরভবা,আত্রাই ও ছোট যমুনার নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। পানিবন্দি এসব মানুষ উঁচু এলাকা ও বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। পুনর্ভবা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে দিনাজপুর সদর উপজেলার বাঙ্গীবেচা ব্রিজ এলাকা, বালুয়াডাঙ্গা হঠাৎপাড়া, লালবাগ, রাজাপাড়ার ঘাট, বিরল মাঝাডাঙ্গা, নতুনপাড়ার কয়েক হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। বন্যার্দের মাঝে খাদ্য বিতরণ করছে বিভিন্ন সেরকারী সংস্থা।
টানা বর্ষন ও ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নেত্রকোণায় বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে গতকাল থেকে বৃষ্টি না থাকায় সকালে কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে উজানের পানি দুর্গাপুর উপজেলায় কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে অন্যান্য উপজেলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার ১০ উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার এখনও পানিবন্ধি রয়েছে।