০২:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

জাপানে একাকিত্ব দূর করছে ‘অবতার’ রোবট

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৮:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৬১৫ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

রোবট কি মানুষের চাকুরি খেয়ে নিচ্ছে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের এই যুগে প্রশ্নটি আরো গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জাপানে এক ক্যাফেতে রোবট কাজে লাগিয়ে মানুষের একাকিত্ব দূর করার এক অভিনব প্রকল্প নজর কাড়ছে৷

জাপানের রাজধানী টোকিওর ‘ডন ক্যাফে’ দেখতে সাধারণ রেস্তোরাঁর মতোই৷ কিন্তু কফি প্রস্তুতকারক ও পরিচারকদের পাশাপাশি সেখানে রোবটও কাজ করে৷ কয়েকটি রোবট চেয়ারে বসে অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করে৷ কয়েকটি আবার অর্ডার করা খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত৷

রেস্তোরাঁর অতিথিরা রোবটগুলির সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে চান৷ মানুষের মতো দেখতে অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রমানবগুলির একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ সেগুলির মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কোনো প্রযুক্তি নেই৷ এই রোবট আসলে এমন মানুষের অবতার, যারা দূর থেকে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করেন৷

রোবটের চোখে বসানো ক্যামেরা, স্পিকার ও মাইক্রোফোনের কল্যাণে তথাকথিত পাইলটরা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন৷ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এই পাইলটরা শুধু বাসা অথবা হাসপাতালের ঘর থেকে কাজ করতে পারেন৷

মায়া তাঁদেরই একজন৷ এক ক্রনিক রোগের কারণে তাঁকে এখন হুইলচেয়ারের উপর নির্ভর করতে হয়৷ ২৪ বছর বয়সি সেই নারীর কাছে কোনো চাকরি না পাওয়া অত্যন্ত কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল৷ ‘ডন ক্যাফে’-তে কাজ পেয়ে তাঁর জীবনটা বদলে গেল৷ নিজের অতীত তুলে ধরে মায়া বলেন, ‘‘আমি অনেক চাকুরির আবেদন করেছি৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর কোনো সুযোগ পাই নি৷ তখন খুব দুঃখ ও অবসাদ হয়েছিল৷ ভেবেছিলাম, কোনোদিন কাজ করতে পারবো না৷ তখনই পাইলটের এই চাকুরির খবর পেলাম৷ সেটা সত্যি অসাধারণ৷ আমার কাছে সেটা ছিল শেষ আশার আলো৷ অতিথিদের মনোরঞ্জন হলে, পরের বারও দেখা হবে কিনা, এমন প্রশ্ন শুনলে আজ আমি কৃতজ্ঞ বোধ করি৷ আমি মানুষকে কোনোভাবে সাহায্য করছি, সেটা জানতে পেরে আমার খুব আনন্দ হয়৷”

ইয়োশিফুজি এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা৷ তিনি অরি ল্যাবোরেটরি নামের কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার৷ এই কোম্পানি ক্যাফের ওরিহিমে রোবট তৈরি করে৷ ছোটবেলা থেকেই ইয়োশিফুজি একাকিত্বের সমস্যায় ভুগতেন৷ স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে অনেক বছর তিনি ক্লাসে যেতে পারেন নি৷ কেন্তারো বলেন, ‘‘সাড়ে তিন বছর আমি স্কুলে যেতে পারি নি৷ সব সময়ে মনো হতো, অন্য একটা শরীর পেলে কী ভালোই না হতো! কারণ চোট পেলে বা হাসপাতালে ভর্তি হলেও অন্য একটি শরীরের কল্যাণে সামাজিক জীবনে অংশ নিতে পারতান৷”

রোবট কি মানুষের চাকুরি খেয়ে ফেলছে? কেন্তারো ইয়োশিফুজি নতুন প্রযুক্তির সামাজিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কাজে লাগিয়ে আমাদের কাজ আরো দক্ষভাবে করা বা কর্মীর সংখ্যা কমাতে চাই না৷ বরং শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে বা শরীর নড়াচড়া না করতে পারলেও যাতে আমরা কাজের জায়গা পেতে পারি, সেটাই হলো লক্ষ্য৷”

রেই এই প্রথম বার ডন ক্যাফেতে এসেছেন৷ সেখানকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না৷ কোনো প্রত্যাশাও ছিল না৷ কিন্তু তাঁর দ্রুত রোবটের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস হয়ে গেছে৷ রেই বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, এটা দারুণ প্রকল্প৷ আশা করি, ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এটিকে একটা সূচনার জায়গা হিসেবে আমরা কাজে লাগাতে পারি৷ মানুষ ও রোবটের মধ্যে যে সংযোগ তৈরি হয়েছে, তা সত্যি হৃদয় ভরিয়ে দেয়৷”

শারীরিক প্রতিবন্ধী বা ক্রনিক রোগীদের প্রায়ই সামাজিক মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়৷ সমালোচকদের মতে, সরাসরি অথবা অবতারের মাধ্যমে তাদের আরো বেশি অংশগ্রহণ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ঘোষণা করা উচিত৷ সেটা সম্ভব হয়ে ওঠা পর্যন্ত ডন ক্যাফের রোবটগুলি একাকিত্ব কমিয়ে যাচ্ছে৷ পাইলট ও গ্রাহক – দুই পক্ষই এর সুফল পাচ্ছেন৷

ডয়চে ভেলে

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

জাপানে একাকিত্ব দূর করছে ‘অবতার’ রোবট

আপডেট সময় : ০৬:৫৮:২৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রোবট কি মানুষের চাকুরি খেয়ে নিচ্ছে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগের এই যুগে প্রশ্নটি আরো গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জাপানে এক ক্যাফেতে রোবট কাজে লাগিয়ে মানুষের একাকিত্ব দূর করার এক অভিনব প্রকল্প নজর কাড়ছে৷

জাপানের রাজধানী টোকিওর ‘ডন ক্যাফে’ দেখতে সাধারণ রেস্তোরাঁর মতোই৷ কিন্তু কফি প্রস্তুতকারক ও পরিচারকদের পাশাপাশি সেখানে রোবটও কাজ করে৷ কয়েকটি রোবট চেয়ারে বসে অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করে৷ কয়েকটি আবার অর্ডার করা খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত৷

রেস্তোরাঁর অতিথিরা রোবটগুলির সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে চান৷ মানুষের মতো দেখতে অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রমানবগুলির একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ সেগুলির মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কোনো প্রযুক্তি নেই৷ এই রোবট আসলে এমন মানুষের অবতার, যারা দূর থেকে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করেন৷

রোবটের চোখে বসানো ক্যামেরা, স্পিকার ও মাইক্রোফোনের কল্যাণে তথাকথিত পাইলটরা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন৷ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এই পাইলটরা শুধু বাসা অথবা হাসপাতালের ঘর থেকে কাজ করতে পারেন৷

মায়া তাঁদেরই একজন৷ এক ক্রনিক রোগের কারণে তাঁকে এখন হুইলচেয়ারের উপর নির্ভর করতে হয়৷ ২৪ বছর বয়সি সেই নারীর কাছে কোনো চাকরি না পাওয়া অত্যন্ত কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল৷ ‘ডন ক্যাফে’-তে কাজ পেয়ে তাঁর জীবনটা বদলে গেল৷ নিজের অতীত তুলে ধরে মায়া বলেন, ‘‘আমি অনেক চাকুরির আবেদন করেছি৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর কোনো সুযোগ পাই নি৷ তখন খুব দুঃখ ও অবসাদ হয়েছিল৷ ভেবেছিলাম, কোনোদিন কাজ করতে পারবো না৷ তখনই পাইলটের এই চাকুরির খবর পেলাম৷ সেটা সত্যি অসাধারণ৷ আমার কাছে সেটা ছিল শেষ আশার আলো৷ অতিথিদের মনোরঞ্জন হলে, পরের বারও দেখা হবে কিনা, এমন প্রশ্ন শুনলে আজ আমি কৃতজ্ঞ বোধ করি৷ আমি মানুষকে কোনোভাবে সাহায্য করছি, সেটা জানতে পেরে আমার খুব আনন্দ হয়৷”

ইয়োশিফুজি এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা৷ তিনি অরি ল্যাবোরেটরি নামের কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার৷ এই কোম্পানি ক্যাফের ওরিহিমে রোবট তৈরি করে৷ ছোটবেলা থেকেই ইয়োশিফুজি একাকিত্বের সমস্যায় ভুগতেন৷ স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে অনেক বছর তিনি ক্লাসে যেতে পারেন নি৷ কেন্তারো বলেন, ‘‘সাড়ে তিন বছর আমি স্কুলে যেতে পারি নি৷ সব সময়ে মনো হতো, অন্য একটা শরীর পেলে কী ভালোই না হতো! কারণ চোট পেলে বা হাসপাতালে ভর্তি হলেও অন্য একটি শরীরের কল্যাণে সামাজিক জীবনে অংশ নিতে পারতান৷”

রোবট কি মানুষের চাকুরি খেয়ে ফেলছে? কেন্তারো ইয়োশিফুজি নতুন প্রযুক্তির সামাজিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কাজে লাগিয়ে আমাদের কাজ আরো দক্ষভাবে করা বা কর্মীর সংখ্যা কমাতে চাই না৷ বরং শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে বা শরীর নড়াচড়া না করতে পারলেও যাতে আমরা কাজের জায়গা পেতে পারি, সেটাই হলো লক্ষ্য৷”

রেই এই প্রথম বার ডন ক্যাফেতে এসেছেন৷ সেখানকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না৷ কোনো প্রত্যাশাও ছিল না৷ কিন্তু তাঁর দ্রুত রোবটের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস হয়ে গেছে৷ রেই বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, এটা দারুণ প্রকল্প৷ আশা করি, ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এটিকে একটা সূচনার জায়গা হিসেবে আমরা কাজে লাগাতে পারি৷ মানুষ ও রোবটের মধ্যে যে সংযোগ তৈরি হয়েছে, তা সত্যি হৃদয় ভরিয়ে দেয়৷”

শারীরিক প্রতিবন্ধী বা ক্রনিক রোগীদের প্রায়ই সামাজিক মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়৷ সমালোচকদের মতে, সরাসরি অথবা অবতারের মাধ্যমে তাদের আরো বেশি অংশগ্রহণ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ঘোষণা করা উচিত৷ সেটা সম্ভব হয়ে ওঠা পর্যন্ত ডন ক্যাফের রোবটগুলি একাকিত্ব কমিয়ে যাচ্ছে৷ পাইলট ও গ্রাহক – দুই পক্ষই এর সুফল পাচ্ছেন৷

ডয়চে ভেলে