কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি
- আপডেট সময় : ১২:১৯:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০
- / ১৫১১ বার পড়া হয়েছে
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। লোকালয়ে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে শতাধিক গ্রাম। এদিকে, যমুনার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায়, সিরাজগঞ্জ , গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, বগুড়া, জামালপুর ও নেত্রকোনায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে লাখো মানুষ।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৬১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও দুর্ভোগ বেড়েছে বন্যা কবলিত জেলার ৩৫ ইউনিয়নের প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের। নলকুপ তলিয়ে থাকায় ও ঘরে শুকনো খাবার না থাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন তারা। এসব এলাকার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলসহ সবজি ক্ষেত।
সিরাজগঞ্জে টানা তিনদিন যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার নদী অববাহিকা ৫টি উপজেলা- সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বন্যা পরিস্হিতির আরও অবনতি হওয়ায় বন্যাদুর্গত পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ পয়েন্টে আরো ১৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সকাল ৬টায় বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গাইবান্ধায় সবগুলো নদ-নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার ৪ উপজেলায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৫০টি গ্রামের সবজি ক্ষেত ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
লালমনিরহাটে টানা ৪ দিন তিস্তা ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর গেল রাত থেকে কমতে শুরু করেছে পানির তোড়। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, সকাল থেকে তিস্তার পানি হাতীবান্ধা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। এদিকে দুর্গত এলাকাগুলোয় এখনো রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে সকালে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ৩৮টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভার আড়াই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সারিয়াকন্দি পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে ৬৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে যমুনা। এতে চরাঞ্চলসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সরকারী হিসেবে, উপজেলার সাড়ে ১২ হাজার পরিবারের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কৃষি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
নেত্রকোণার নতুন নতুন এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে সদর, বারহাট্টা ও কলমাকান্দার নিম্নাঞ্চলের ৬০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রামের অনেক কাঁচা-পাঁকা সড়কের উপর দিয়ে পানি বয়ে যাচ্ছে।
পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বেড়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ ভাঙ্গন ঝূকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থানীয় সংসদ সদস্য চীফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরীর নির্দেশে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
টাঙ্গাইলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভুঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী, নাগরপুর ও সদর উপজেলার চরাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রাম এখন বন্যা কবলিত। কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।