অপারেশন সার্চ লাইট: জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার নারকীয় পরিকল্পনা
- আপডেট সময় : ০৯:৪১:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ ২০২১
- / ১৫০৪ বার পড়া হয়েছে
মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি ঘৃণীত ও কলঙ্কিত অধ্যায়ের নাম ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই রাতে বাংলাদেশের মানুষের ওপর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ চালায় পকিস্তান হানাদার বাহিনী। ভয়াবহ এই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্মরণ করেন বাঙালি জাতি। এই রাতেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চ লাইট’এর নামে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়, মেতে ওঠে গণহত্যায়। ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ ছিল বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার এক নারকীয় পরিকল্পনা।
নতুন নতুন অর্জন ও প্রাপ্তির উল্লাস আর প্রত্যাশাগুলোকে সামনে রেখে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিজয় অর্জনের পেছনে যে ত্যাগ, তা ভোলেনি দেশের মানুষ। সেইসব ত্যাগের এক বড় ইতিহাস ১৯৭১’র ২৫ মার্চ। গণহত্যা দিবস।বিষয়টি শুধু একরাতের হত্যাকান্ডই ছিলনা, ছিল বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলংকজনক ও জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।
বাঙালির মুক্তির পথ চিরতরে বন্ধ করতে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে “অপারেশন সার্চ লাইট” এ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। একযোগে হামলা চলে, পিলখানা, ইপিআর সদর দপ্তর ও রাজারবাগে। পরিকল্পিত ও নির্বিচারের সেই হত্যাযজ্ঞে প্রাণ হারান প্রায় ১০ হাজার নিরীহ মানুষ।
সেনা অভিযানের শুরুতেই গ্রেপ্তার হন জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হামলা চলে কুমিল্লা ও যশোর সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বাঙালি সেনাদের ওপর। রেহাই পায়নি চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষও। নির্বিচারে গুলি চলে তাদের উপর। ওই রাত থেকেই আধুনিক অস্ত্রশন্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নামে বীর বাঙালীরা। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে নানাভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন তারা।
পরদিন ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার আপামর জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে।ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকা অফিসে আগুন দেয়া হয়। পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বহু সাংবাদিককে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।ভয়াল সেই রাতে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়। অনেকের মৃতদেহ ফেলে রাখা হয় নর্দমায়, খোলা রাস্তায়।
৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।