বিএডিসিতে চলেছে দুর্নীতির মহোৎসব, সস্ত্রীক বিদেশ ভ্রমণে চেয়ারম্যান রুহুল আমিনসহ মন্ত্রনালয়ের ৩ কর্মকর্তা
- আপডেট সময় : ০২:৪০:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৫০২ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) সার আমদানির নামে চলছে দুর্নীতির মহাৎসব। বিএডিসি পরিনত হয়েছে দূর্নীতির অভয়ারণ্যে। জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) চুক্তির মাধ্যমে সার আমদানির সরকারি নির্দেশনা থাকলেও, তা লঙ্ঘন করে বিদেশি বেসরকারি ট্রেডিং কোম্পানির মাধ্যমে নিম্নমানের ও ভেজাল সার আমদানির, রাষ্ট্রীবিরোধী চুক্তিসহ নানা অভিযোগও রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া নিম্নমানের ও ভেজাল সার আমদানীর করে লেটার অফ ক্রেডিটের (এলসি) মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে পাচার সেই টাকা গ্রহনের জন্য সস্ত্রীক বিদেশ ভ্রমণে গেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খানসহ কৃষি মন্ত্রনালয়ের ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
জানাগেছে, বিগত ২০১৪ সাল থেকেই কানাডা থেকে জি-টু-জি (সরকার টু সরকার) চুক্তির মাধ্যমে পটাশ সার আমদানি করছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। শুরু থেকেই সার আমদানীর ক্ষেত্রে ৫% হারে মুল্য ছাড় পেয়ে আসছিল বিএডিসি। এই মুল্য ছাড় সার আমদানির পরিমানের উপর নির্ভরশীল ছিল না। কিন্তু চলতি বছর কৃষি মন্ত্রণালয় সমঝোতার নামে কানাডার সাথে নতুন করে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে বিএডিসি। নতুন চুক্তি করার কারনে সার আমদানী খাতে রেসিপ্রকাল ট্যারিফের মতো অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। কানাডা থেকে সার কম আমদানী করলে কম ডিসকাউন্ট এবং বেশি আমদানী করলে বেশি ডিসকাউন্টের শর্ত চুক্তিপত্রে যোগ করা হয়েছে। বিগত ২০১৪ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কানাডা থেকে জিটুজির মাধ্যমে যে পরিমানই সার আমদানি করা হতো সেই আমদানীকৃত সারের পরিমান থেকে ৫% মূল্য ছাড় পেতো বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। ২০১৪ হতে ২০২৩ পর্যন্ত প্রতি বছর বিএডিসি ২ লাখ মেট্্িরকটন করে সার কানাডা হতে আমদানি করত একই মুল্য নির্ধারণ পদ্ধতিতে ৫% করে মুল্যে ছাড় পেয়ে আসছিল। কিন্তু বর্তমান চুক্তিতে ৫% মূল্য ছাড় পেতে হলে নূন্যতম ৫ লাখ মেট্্িরকটন সার আমদানি করতে হবে।
একটি বিশ^স্ত সুত্রে জানাগেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খান বিএডিসিতে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিজের আখের গোছানোর জন্য নানা ধরণের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছেন। বিএডিসির সার আমদানীর জন্য নিজেদের ভাড়াকৃত জাহাজে অন্য দেশ অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সার আমদানি করার কো-শীপমেন্ট নিয়ম চালু করেছে। গত ২৯ এপ্রিল কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশনকে (সিসিসি) আইন মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকার ভেটিং এবং মতামত ছাড়াই কো-শীপমেন্ট চুক্তি অন লাইনে মাধ্যমে সম্পাদন করেছেন। দেশ বিরোধী ও বেআইনিভাবে সম্পাদন করা কো-শীপমেন্ট চুক্তির ফলে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের নিজস্ব টাকায় অন্য দেশ অতবা অন্য প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য বিনে পয়সায় বিদেশ থেকে সার আমদানি করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণের পথ সুগম করে নিয়েছে। কো-শীপমেন্ট চুক্তির পর গত জুলাই মাসে কানাডা থেকে আমদানীকৃত প্রথম লটের সারবাহী জাহাজ এমভি জেনকো মেরীতে ইন্দোনেশিয়ার একটি বেসরকারী কোম্পানীর কানাডা থেকে আমদানী ইন্দোনেশিয়ার জন্য সার বাংলাদেশের ভাড়াকৃত জাহাজে করে এনে প্রায় ২০ হাজার মেট্্িরকটন সার সুমাত্রায় খালাস করে অবশিষ্ট বাংলাদেশের সার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। সুমাত্রায় খালাসকৃত ২০ হাজার মেট্্িরকটন সার বহনের ভাড়ার টাকা কারা গ্রহন করেছে। এছাড়া একই ভাবে গত সেপ্টেম্বর মাসে দ্বিতীয় লটে কানাডা থেকে বিএডিসির ভাড়াকৃত জাহাজে ভারতে ৩০ হাজার মেট্্িরকটন সার খালাস করে অবশিষ্ট সার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। সুত্রটি জানায় কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন (সিসিসি) থেকে মোটা অংকের উৎকোচের গ্রহন করে কো-শীপমেন্ট কাজের পুরো সুবিধা কানাডার সার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে। এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগে জাহাজ থেকে সার খালাস করলে জাহাজ মালিককে বিএডিসি থেকে একটি বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হতো এবং বিলম্বে সার খালাস করলে বিএডিসিকে জরিমানা প্রদানের জন্য ফিক্সড ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার ডলার প্রদান করা হতো। কিন্তু বর্তমানে দেশ বিরোধী এই চুক্তির কারনে সারের বাজার মূল্য অনুসারে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ডলার প্রদান করতে হবে।
সুত্রটি আরো জানায়, কানাডিয়ান কমার্শিয়াল কর্পোরেশন (সিসিসি) সাথে চুক্তি করার পর নিজেদের উৎকোচের টাকা গ্রহনের জন্য কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ৭ নভেম্বর সস্ত্রীক কানাডায় সফরে গেছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের সস্ত্রীক বিদেশ সফরের জন্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন হলেও বিএডিসির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যাওয়া এই দলের কেউই অনুমতি নেয়নি। এছাড়া সফর সঙ্গী হিসেবে সরকারি আদেশে নিজের পরিচয় গোপন করে গিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টার একান্ত সচিব কাজী হাফিজুল আমিন, বিএডিসির সদস্য পরিচালক মোঃ মজিবুররহমান ও কৃষি মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব মোঃ মনিরুজ্জামান। বিএডিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রীবিরোধী চুক্তি করে নিজেদের উৎকোচের টাকা গ্রহন করতে নিজেদের বেগমদেরকে নিয়ে কানাডার বেগমপাড়া ভ্রমণ করে তারা আগামী ২১ নভেম্বর দেশে ফিরবেন। ঐ কর্মকর্তা আরো জানান, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খানের চাকরীর মেয়াদ আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি দেশের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের আখের গোছাচ্ছেন। তার দুরদর্শীতার অভাবে দেশে এবার সারের মহা সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খান তার স্ত্রী ফারাহ সাগরিক কে নিয়ে কোন প্রকার সরকারী অনুমতি ছাড়াই চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদিআরব, ফেব্রুয়ারী মাসে চায়না, জুলাই মাসে মালয়েশিয়া এবং আগস্ট মাসে মরক্কো সফর করেছেন।
এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন খানকে মোবাইলে কল করা হলে তিনি ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার সাড়া পাওয়া যায়নি।



















