কে এই আব্দুল মাজেদ
- আপডেট সময় : ০৬:১৮:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ এপ্রিল ২০২০
- / ১৫১৪ বার পড়া হয়েছে
কে এই আব্দুল মাজেদ? এতদিন কোথায় পালিয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এই খুনী? কিভাবেই বা ধরা পড়লো আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে? ২২ বছর আগে দেয়া সেই ফাঁসির সাজা, সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে কিভাবে কার্যকর হলো?
৭৫ এর ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের।
পৈশাচিক ঐ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন সেনাবাহিনীর বরখাস্ত হওয়া ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এই খুনীর জন্ম ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারা গ্রামে। মরহুম আলী মিয়া চৌধুরীর ছেলে মাজেদ ৪ কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার পলাতক ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সেনাবাহিনীর বরখাস্ত হওয়া ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ। ৬ এপ্রিল রাতে তাকে মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এই খুনী জানান, সে গেল ২৩ বছর পাকিস্তান, লিবিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে ছিলেন। এর মাঝে দুই দশকের বেশী সময় তিনি কোলকাতায় অবস্থান করেন। সম্প্রতি করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে গেল ২৬ মার্চ ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে মাজেদ। দেশে ফেরার পর মিরপুর ডিওএইচএস-এর এক নম্বর সড়কের ১০/এ বাসায় ওঠে সে।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাসহ জেলে জাতীয় চারনেতার হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় মাজেদ। তিনি হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের আদেশে বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক হয়ে লিবিয়ায় যান। সেখানে তিনি ক্যু করা অফিসারদের সঙ্গে প্রায় ৩ মাস থাকেন। সে সময়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ক্যু করা অফিসারদের হত্যাকাণ্ডের পুরস্কার স্বরূপ বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে চাকরি দেন। তারই অংশ হিসেবে ক্যাপ্টেন মাজেদকে পুরস্কার হিসেবে সেনেগাল দূতাবাসে পাঠানো হয়।
পরে ১৯৮০ সালের ২৬ মার্চ জিয়া সরকার মাজেদকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। দেন সচিব পদে পদোন্নতি। প্রথমে বিআইডব্লিউটিসি এবং পরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করে সে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য শুরু করলে তিনি আটক হওয়ার ভয়ে আত্মগোপন করেন।
৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয় বিচারিক আদালত। ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ ১২ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে তিনজনকে খালাস দেয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টের সেই রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।
৬ এপ্রিল গ্রেফতারের পর কারাগার থেকেই ফাঁসির সাজা মওকুফে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এই খুনী। সেই আবেদন খারিজ করা হলে মাজেদের ফাঁসি কার্যকরে আর কোন আইনি বাধা নেই বলে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। সব শেষ সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয় প্রায় ২২ বছর আগে মাজেদকে দেয়া বিচারিক আদালতের সেই ফাঁসির সাজা।