ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারের জলে প্লাবিত উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল
- আপডেট সময় : ০৭:১৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মে ২০২১
- / ১৫০৬ বার পড়া হয়েছে
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বইছে। বাধ ভেঙ্গে অনেক এলাকার নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ। ঝড়ে গাছ-পালা উপড়ে গেছে। গাছ চাপায় মানুষও মরেছে। তবে, জনগণের জানমাল রক্ষায় বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ও সাগরে। সকাল থেকেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সাথে মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া বইছে বন্দরনগরীতে। চট্টগ্রামের সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল থেকেই বহিঃনোঙ্গরে লাইটার জাহাজ পাঠানো বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, কর্ণফুলী চ্যানেলকে সুরক্ষা দিতে নদীতে থাকা সব ধরণের নৌযান পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে শাহ আমানত সেতুর ওপারে। তবে, জেটির অপারেশন ও ডেলিভারি স্বাভাবিক আছে।
খুলনার কয়রা উপকূলে বইছে ঝড়ো বাতাস। নদীতে উত্তাল ঢেউ। সেই সঙ্গে চলছে রোদ-বৃষ্টির খেলা। ভোর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনো চলছে ঝড়ো বৃষ্টি। এদিকে, কয়রা হামকুড়ো এলাকায় বেড়িবাঁধে ফাটল ধরেছে।
ভোলার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। বাধ ভেঙে মনপুরা উপজেলার দু’টি ও চরফ্যাশনের দুই ইউনিয়নের ছ’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ। এছাড়া ভোলা সদর, তজুমদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন ১০টি চর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। লালমোহনে গাছ চাপায় এক রিকশাচালক নিহত হয়েছে।
কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেঙ্গে গেছে বেশ কিছু কাঁচা ঘর-বাড়ি। অস্বাভাবিক জোয়ারে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে। বিশেষ করে টেকনাফের সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার পৌর এলাকার সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরারটেক শুটকি মহাল, বন্দরপাড়া ও মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বেশ কিছু এলাকা এখন পানিরে নিচে। সকাল থেকে মুশলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জেলার ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৫টি কিল্লা এবং প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।
ঝালকাঠিতে সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলায় বিষখালী নদীর বেরিবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। বাড়ির আঙ্গিনাসহ তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। কাঠালিয়া সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ নিম্নাঞ্চলের ১৫টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, কৈখালী, মুন্সিগঞ্জ ও পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের ১৫টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। নদীর পানি তিন-চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোর রাত থেকে থেমে থেমে দমকা হাওয়া চলছে। মাঝে মাঝে ভারী ও মাঝারী বৃষ্টি হচ্ছে।
গোপালগঞ্জে দমকা হওয়ার সাথে সাথে রাত থেকে চলছে বৃষ্টি। জেলার ১৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিমসহ উদ্ধার তৎপরতার জন্য রেড ক্রিসেন্ট ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা রয়েছে।
ঝিনাইদহে ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে অর্ধশত বাড়িঘর। উপড়ে গেছে শত শত গাছপালা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার আড়মুখী গ্রামে এ ঝড় আঘাত হানে। ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড স্থায়ী এ ঝড়ে দু’কিলোমিটার এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে।
পটুয়াখালীতে পানিবন্দি হয়েছে পড়েছে ৩২ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বেড়িবাঁধ ভেঙে ভেসে গেছে ২৬শ’ ৩২ টি পুকুর ও পাঁচ’শ ৯০টি মাছের ঘের। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বরগুনায় বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরের প্রধান বাজারসহ সদর উপজেলার দুটি, পাথরঘাটার তিনটি, তালতলীর তিনটি গ্রামসহ বিভিন্ন বাজার ও সড়ক জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, জোয়ারের পানি বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।