স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি ফেনীর ২ লক্ষাধিক মানুষ,নিহত ১
- আপডেট সময় : ১১:৪৫:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
- / ১৬৪৮ বার পড়া হয়েছে
ফেনীর সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরাম ও ফুলগাজীতে দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় বন্যা হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে গৃহবন্দি লাখো মানুষ। তলিয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর। পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, মৌলভীবাজার ও কুমিল্লায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় বন্যার পানিতে ডুবেছে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ৭০টি গ্রাম। এতে আবারও দুর্ভোগ পড়েছে স্থানীয় জনপদ।
গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর ভাঙ্গা বাঁধের ২৪টি স্থান দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। উপজেলার অভ্যন্তরীন বিভিন্ন সড়ক ডুবে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় ৩১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় যা এ যাবত কালের সর্বোচ্চ।
ভারী বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর। পানি উঠেছে আশেপাশের অন্তত ১০টি গ্রামে। পানির তোড়ে একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। পানিতে ডুবে মারা গেছে একজন। স্থানীয়রা জানায়, গেলরাতে থেকে আখাউড়ায় ভারি বর্ষণ শুরু হয়। সকাল থেকে বন্দরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল দিয়ে ভারত থেকে তীব্র গতিতে পানি ঢুকতে থাকে। এক পর্যায়ে স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ্রপুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে । ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। এর আগে গতকাল খলাপাড়া এলাকায় হাওড়া নদীর বাঁধের কিছু অংশ ভেঙ্গে পানি ঢুকতে শুরু করে। আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজালা পারভীন রূহি জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। বন্যা দুর্গতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে…টানা বর্ষণ ও বন্যায় খাগড়াছড়িতে সেতু সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে মহালছড়ি উপজেলার সাথে মুবাছড়ি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দ্রুত সেতুসহ সড়কটি মেরামত করার দাবী জানিয়েছেন
এলাকাবাসী।
পটুয়াখালীতে টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেত। উত্তাল কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর। উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ঝড়ো হওয়া বয়ে যাওয়ার আশংকা করছে আবহাওয়া অফিস। ফলে পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
কুমিল্লায় গেল তিনদিনে ২৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে গেল ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৫৬ মিলিমিটার। আরো ভারী বর্ষনের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ভারতের ত্রিপুরার গোমতী নদীর উৎপত্তি স্থলে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় গোমতী নদীর পানি প্রবাহ বেড়েছে। কুমিল্লা অংশের চরগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে শতশত বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। কুমিল্লা নগরীর অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
মৌলভীবাজারের বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি । এ পর্যন্ত জেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে নৌকা না থাকায় বন্যার্তদের উদ্ধার করতে পারছেন না স্বেচ্ছাসেবীরা।
ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বেড়ে চলেছে হবিগঞ্জের খোয়াই নদীর পানি। নদীর পানি সবগুলো পয়েন্টেই বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
এদিকে, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শহরতলীর জালালাবাদ এলাকার বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে । এতে করে রিচি ও লোকড়া ইউনিয়নের হাওরে রোপা আমন ও মৎস্য খামারিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।