০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

পণ্যের চড়াদামে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ১২:৪৩:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • / ১৫৮৯ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, পেঁয়াজ এবং আলুর দাম বেঁধে দিয়েছে। এছাড়া ভোজ্য তেলের দামও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার দাম বেঁধে দিলেও শুক্রবার সেই দামে পণ্যগুলো কেনা যায়নি।

বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজির দাম হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু শুক্রবার বাজারে গিয়ে কোথাও এই দামে ওই তিনটি পণ্যপাওয়া যায়নি। ডিমের হালি ৪৮ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়, আর আলুর কেজি ৫০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সাদা ও লাল ডিম নিয়ে জটিলতা আছে। ফার্মের মুরগির ডিম যেটা লাল রঙের, তার দাম বেশি। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই রঙের ডিম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলেনি। আর দোকানে মোড়কে করে কয়েকটি ব্র্যান্ডের মুরগির ডিম বিক্রি হয়। সেগুলোর দাম আরো বেশি। সে ব্যাপারেও কিছু বলা হয়নি।  কলাবাগানের খুচরা বিক্রেতা মিন্টু মিয়া দাবি করেন,” দুই ধরনের ডিমের দামে পার্থক্য থাকবেই। লাল ডিমের চাহিদা বেশি, তাই দামও বেশি।”

আর রহিম মিয়া দাবি করেন, “আমরা আগের দামেই তিনটি পণ্য বিক্রি করছি। পাইকারি দাম কমালে আমরাও কমাতে পারবো, তার আগে নয়।”

তিনি বলেন, “একটি ডিম ১২ টাকায় বেচতে হলে আমাদের সাড়ে ১১ টাকায় কিনতে হবে। ৩৬ টাকা কেজি আলু বিক্রি করতে হলে আমাদের ৩১-৩২ টাকায় কিনতে হবে। পেঁয়াজ যদি ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে পারি তাহলে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু পাইকারি বাজারে ওই দামে তো আমরা এখনো পাচ্ছি না। যখন পাবো তখন সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করবো।”

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা মনিটরিংয়ের জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করবেন। কেউ এর ব্যতয় করলে আইন অনুযায়ী দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ”

তিনি জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে ওই দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্যাকেটজাত সয়াবিন ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে যথাক্রমে ১৬৯ ও ১৪৯ টাকা এবং পামঅয়েলের দাম চার টাকা কমিয়ে ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোজ্য তেলও নতুন এই দামে শুক্রবার কোথাও পাওয়া যায়নি। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

সরকার এর আগেও চিনি, ভোজ্য তেল ও গরুর মাংসের দাম বেঁধে দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তা কোনো বিক্রেতাই মানেনি। তারা তাদের নিজেদের ঠিক করা দামেই বিক্রি করেছে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “এই দাম বেঁধে দেয়াকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে এটা কার্যকর করতে হলে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। এই দাম বেধে দেয়ার অর্থ হলো  কিছু পণ্য নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের চেষ্টা করা। কিন্তু সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। সংকটের সময় পণ্যগুলোর আমদানি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এমনভাবে উন্মুক্ত করতে হবে, যাতে কোনো সিন্ডিকেট এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। ভোজ্য তেলের আমদানি যেমন  হাতে গোণা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে, সেটা হলে চলবে না।”

তার কথা, “এর আগে একবার বেশ কিছু কৃষিপণ্যের দাম ঠিক করে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। আবার সিটি কর্পোরেশনও বাজারে পণ্যের দামের তালিকা টাঙিয়ে দেয়। কিন্তু কোনো কাজে আসে না।”

তবে উৎপাদকেরা বলছেন উৎপাদন খরচ না কমাতে পারলে দাম কমানো কঠিন, সরকারকে সেদিকেও নজর দিতে হবে। আর কয়েক হাত বদল হয়ে খুচরা ক্রেতার কাছে পণ্য যায়। তাই কোন পর্যায়ে কত দাম হবে, তা বেঁধে না দিলে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, “ডিমের দাম নির্ভর করে উৎপাদন খরচের ওপর। গত এক সপ্তাহে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে গেছে। তাহলে ডিমের দাম কমবে কীভাবে। খুচরা বিক্রেতার ওপর চাপিয়ে দিলে তো হবে না। সে তো কেনা দাম হিসাব করে বিক্রি করবে। তাই উৎপাদন থেকে শুরু করে যে কয়বার হাত বদল হয় সবখানেই দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। দাম নির্ধারণ হতে হবে যৌক্তিক। ১০টাকা ৩০ পয়সা যদি একটি ডিমের উৎপাদ খরচ হয়, তাহলে সেটা বাজারে কয়েক হাত ঘুরে কিভাবে ১২ টাকায় বিক্রি হবে? আসলে ডিমের দাম কমবে না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি আরো ক্ষুণ্ণ হবে।”

তার কথায়, “সরকারি আইনে বলা আছে কর্পোরেট গ্রুপগুলো  শতকরা সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ লাভ করতে পারবে। এখন খামারিরা লোকসানে পড়লে কর্পোরেটরা কিন্তু ঠিকই লাভ করবে।”

পণ্যের দামের সঙ্গে উৎপাদন খরচ এবং সরবরাহ দুটিই যুক্ত। সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হলেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত পণ্য  থাকার পরও  সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য মজুত বা সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লোটার অভিযোগ আছে। সুতারং পণ্য সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য সংকট দেখা দিলে আমদানির মধ্যমে সেটা ঠিক করা যায়। এর আগে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হবে এমন খবরে ডিমের দাম কমে গিয়েছিল।

সিরডাপের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, “সরকার যদি কোনো পণ্যের দাম খুচরা পর্যায়ে বেঁধে দেয়, তাহলে ওই পণ্য উৎপাদন থেকে খুচরা ক্রেতার কাছে যাওয়া পর্যন্ত যতগুলো ধাপ আছে সব ধাপেই দাম বেঁধে দিতে হবে। তা না হলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এটা ঠিক করতে হবে উৎপাদন খরচ হিসাব করে। সেটা না করলে আরেকটি সংকট তৈরি হতে পারে। কারণ, কেউ তো আর লোকসান দিয়ে পণ্য বিক্রি করবে না। সেটা করতে বাধ্য করলে বাজারে সরবরাহ কমে যাবে। বিক্রেতারা পণ্য বিক্রি করতে চাইবে না।”

তার কথায়,” সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। এটা ঠিক না থাকলেই দাম বেড়ে যাবে। প্রয়োজনে পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করে সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। আর কোনো পণ্যের দাম সহনীয় বা ঠিক রাখতে হলে তার উৎপানের জন্য আরো যা লাগে, তার দামও ঠিক রাখতে হবে। মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে মুরগির দামও বেড়ে যাবে।”

জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর এর আগে বলেছিল যেসব পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয় বা নির্দিষ্ট থাকে, সেখানে দাম বেশি নিলে অভিযান চালানো সহজ। কারণম দাম ঠিক করে দেয়া না থাকলে আইনে কেউ যে বেশি দামে বিক্রি করছে, তা বলা কঠিন। এটা কারো নিজস্ব চিন্তায় হবে না। দামের দায়িত্ব যে কর্তৃপক্ষের, তাদের বলতে হবে। আর এবার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর দাম বেঁধে দেয়া পণ কী দামে বিক্রি হচ্ছে  তা মনিটরিং করবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে। তবে তারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে শুক্রবার, অর্ধাৎ দাম বেঁধে দেয়ার পরের দিন তা জানা যায়নি। চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে।

তবে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, “বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ কেউ নষ্ট করলে, সিন্ডিকেট করলে, আমরা মামলা করে ব্যবস্থা নিই। এখন তো তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হলো। আমরা দেখবো এটা ঠিকমতো চলে কিনা, কোনো বাধার সৃষ্টি করা হয় কিনা। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখছি। সেরকম হলে যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবো।”

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

পণ্যের চড়াদামে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো

আপডেট সময় : ১২:৪৩:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিম, পেঁয়াজ এবং আলুর দাম বেঁধে দিয়েছে। এছাড়া ভোজ্য তেলের দামও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার দাম বেঁধে দিলেও শুক্রবার সেই দামে পণ্যগুলো কেনা যায়নি।

বেঁধে দেয়া দাম অনুযায়ী, প্রতিটি ফার্মের ডিম ১২ টাকা, আলু খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজির দাম হবে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু শুক্রবার বাজারে গিয়ে কোথাও এই দামে ওই তিনটি পণ্যপাওয়া যায়নি। ডিমের হালি ৪৮ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়, আর আলুর কেজি ৫০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সাদা ও লাল ডিম নিয়ে জটিলতা আছে। ফার্মের মুরগির ডিম যেটা লাল রঙের, তার দাম বেশি। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দুই রঙের ডিম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলেনি। আর দোকানে মোড়কে করে কয়েকটি ব্র্যান্ডের মুরগির ডিম বিক্রি হয়। সেগুলোর দাম আরো বেশি। সে ব্যাপারেও কিছু বলা হয়নি।  কলাবাগানের খুচরা বিক্রেতা মিন্টু মিয়া দাবি করেন,” দুই ধরনের ডিমের দামে পার্থক্য থাকবেই। লাল ডিমের চাহিদা বেশি, তাই দামও বেশি।”

আর রহিম মিয়া দাবি করেন, “আমরা আগের দামেই তিনটি পণ্য বিক্রি করছি। পাইকারি দাম কমালে আমরাও কমাতে পারবো, তার আগে নয়।”

তিনি বলেন, “একটি ডিম ১২ টাকায় বেচতে হলে আমাদের সাড়ে ১১ টাকায় কিনতে হবে। ৩৬ টাকা কেজি আলু বিক্রি করতে হলে আমাদের ৩১-৩২ টাকায় কিনতে হবে। পেঁয়াজ যদি ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে পারি তাহলে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু পাইকারি বাজারে ওই দামে তো আমরা এখনো পাচ্ছি না। যখন পাবো তখন সরকারের বেঁধে দেয়া দামে বিক্রি করবো।”

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “নির্ধারিত দামে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা মনিটরিংয়ের জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং কৃষি ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করবেন। কেউ এর ব্যতয় করলে আইন অনুযায়ী দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ”

তিনি জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের আলোকে ওই দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে। এছাড়া, প্যাকেটজাত সয়াবিন ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়ে যথাক্রমে ১৬৯ ও ১৪৯ টাকা এবং পামঅয়েলের দাম চার টাকা কমিয়ে ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোজ্য তেলও নতুন এই দামে শুক্রবার কোথাও পাওয়া যায়নি। আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

সরকার এর আগেও চিনি, ভোজ্য তেল ও গরুর মাংসের দাম বেঁধে দিয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে তা কোনো বিক্রেতাই মানেনি। তারা তাদের নিজেদের ঠিক করা দামেই বিক্রি করেছে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, “এই দাম বেঁধে দেয়াকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। তবে এটা কার্যকর করতে হলে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে। এই দাম বেধে দেয়ার অর্থ হলো  কিছু পণ্য নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের চেষ্টা করা। কিন্তু সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। সংকটের সময় পণ্যগুলোর আমদানি উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এমনভাবে উন্মুক্ত করতে হবে, যাতে কোনো সিন্ডিকেট এটা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে। ভোজ্য তেলের আমদানি যেমন  হাতে গোণা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে, সেটা হলে চলবে না।”

তার কথা, “এর আগে একবার বেশ কিছু কৃষিপণ্যের দাম ঠিক করে দিয়েছিল কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। আবার সিটি কর্পোরেশনও বাজারে পণ্যের দামের তালিকা টাঙিয়ে দেয়। কিন্তু কোনো কাজে আসে না।”

তবে উৎপাদকেরা বলছেন উৎপাদন খরচ না কমাতে পারলে দাম কমানো কঠিন, সরকারকে সেদিকেও নজর দিতে হবে। আর কয়েক হাত বদল হয়ে খুচরা ক্রেতার কাছে পণ্য যায়। তাই কোন পর্যায়ে কত দাম হবে, তা বেঁধে না দিলে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, “ডিমের দাম নির্ভর করে উৎপাদন খরচের ওপর। গত এক সপ্তাহে পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে গেছে। তাহলে ডিমের দাম কমবে কীভাবে। খুচরা বিক্রেতার ওপর চাপিয়ে দিলে তো হবে না। সে তো কেনা দাম হিসাব করে বিক্রি করবে। তাই উৎপাদন থেকে শুরু করে যে কয়বার হাত বদল হয় সবখানেই দাম নির্ধারণ করে দিতে হবে। দাম নির্ধারণ হতে হবে যৌক্তিক। ১০টাকা ৩০ পয়সা যদি একটি ডিমের উৎপাদ খরচ হয়, তাহলে সেটা বাজারে কয়েক হাত ঘুরে কিভাবে ১২ টাকায় বিক্রি হবে? আসলে ডিমের দাম কমবে না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি আরো ক্ষুণ্ণ হবে।”

তার কথায়, “সরকারি আইনে বলা আছে কর্পোরেট গ্রুপগুলো  শতকরা সর্বোচ্চ ৩০ ভাগ লাভ করতে পারবে। এখন খামারিরা লোকসানে পড়লে কর্পোরেটরা কিন্তু ঠিকই লাভ করবে।”

পণ্যের দামের সঙ্গে উৎপাদন খরচ এবং সরবরাহ দুটিই যুক্ত। সরবরাহ চেইন বাধাগ্রস্ত হলেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে। পর্যাপ্ত পণ্য  থাকার পরও  সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্য মজুত বা সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে মুনাফা লোটার অভিযোগ আছে। সুতারং পণ্য সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য সংকট দেখা দিলে আমদানির মধ্যমে সেটা ঠিক করা যায়। এর আগে ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হবে এমন খবরে ডিমের দাম কমে গিয়েছিল।

সিরডাপের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, “সরকার যদি কোনো পণ্যের দাম খুচরা পর্যায়ে বেঁধে দেয়, তাহলে ওই পণ্য উৎপাদন থেকে খুচরা ক্রেতার কাছে যাওয়া পর্যন্ত যতগুলো ধাপ আছে সব ধাপেই দাম বেঁধে দিতে হবে। তা না হলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। এটা ঠিক করতে হবে উৎপাদন খরচ হিসাব করে। সেটা না করলে আরেকটি সংকট তৈরি হতে পারে। কারণ, কেউ তো আর লোকসান দিয়ে পণ্য বিক্রি করবে না। সেটা করতে বাধ্য করলে বাজারে সরবরাহ কমে যাবে। বিক্রেতারা পণ্য বিক্রি করতে চাইবে না।”

তার কথায়,” সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। এটা ঠিক না থাকলেই দাম বেড়ে যাবে। প্রয়োজনে পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করে সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। আর কোনো পণ্যের দাম সহনীয় বা ঠিক রাখতে হলে তার উৎপানের জন্য আরো যা লাগে, তার দামও ঠিক রাখতে হবে। মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে মুরগির দামও বেড়ে যাবে।”

জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর এর আগে বলেছিল যেসব পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হয় বা নির্দিষ্ট থাকে, সেখানে দাম বেশি নিলে অভিযান চালানো সহজ। কারণম দাম ঠিক করে দেয়া না থাকলে আইনে কেউ যে বেশি দামে বিক্রি করছে, তা বলা কঠিন। এটা কারো নিজস্ব চিন্তায় হবে না। দামের দায়িত্ব যে কর্তৃপক্ষের, তাদের বলতে হবে। আর এবার বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর দাম বেঁধে দেয়া পণ কী দামে বিক্রি হচ্ছে  তা মনিটরিং করবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে। তবে তারা কী পদক্ষেপ নিচ্ছে শুক্রবার, অর্ধাৎ দাম বেঁধে দেয়ার পরের দিন তা জানা যায়নি। চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে।

তবে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, “বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ কেউ নষ্ট করলে, সিন্ডিকেট করলে, আমরা মামলা করে ব্যবস্থা নিই। এখন তো তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া হলো। আমরা দেখবো এটা ঠিকমতো চলে কিনা, কোনো বাধার সৃষ্টি করা হয় কিনা। আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে রাখছি। সেরকম হলে যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেবো।”

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ