গোল্ডেন মনির সেলসম্যান থেকে শিল্পপতি, রাজউকের দুইশ’ প্লটের মালিক

- আপডেট সময় : ০৮:১০:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০২০
- / ১৫০২ বার পড়া হয়েছে
৯০ দশকের দিকে গাউছিয়া মার্কেটে একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করতেন পরবর্তীতে কোকারিজের ব্যবসা এবং লাগেজ ব্যবসায় যুক্ত হন। ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে বিভিন্ন মাল দেশে আনার কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন এবং বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ অবৈধভাবে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তার স্বর্ণ চোরাচালানের রুট ছিল ঢাকা-সিঙ্গাপুর এবং ভারত। এসব দেশ থেকে সে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ বাংলাদেশের নিয়ে আসতেন। আস্তে আস্তে সে সবার কাছে গোল্ডেন মনির হিসেবে খ্যাতি পায়।
অবৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি এবং ভূমি দখল বাণিজ্য করে মনিরুল ইসলাম ওরফে গোল্ডেন মনির হাজার কোটি টাকার অধিক মূল্যের সম্পদ গড়েছেন। রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তায় শুধু সিল নকল করে রাজধানীতেই দুইশ’র বেশি পল্টের মালিক বুনে যায়। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানে নেমে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে র্যাব।
২০ নভেম্বর শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত অভিযানে রাজধানীর বাড্ডা থেকে গোল্ডেন মনিরকে অস্ত্র, মাদক এবং বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রাসহ গ্রেফতার করে র্যাব। অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জনিয়েছেন র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহবলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা হয়। গোল্ডেন মনিরের আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তিনি ভ’মিদস্যু। রাজউকের কতিপয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে ভুয়া সিল বানিয়ে বিপুল পরিমাণ ভূমি দখল করে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। ডিআইটি প্রজেক্ট ছাড়াও বাড্ডা, নিকুঞ্জ, উত্তরা ও কেরানীগঞ্জে তার দুইশ’টির বেশি পল্ট আছে বলে র্যাব জানতে পেরেছে। রাজউকের সম্পত্তি বেদখল করে এবং স্বর্ণ চোরাচালান করে বর্তমানে তার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি টাকারও বেশি।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, মনিরের বাসা থেকে প্রায় ১০টি দেশের বিভিন্ন পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। যার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় ৯ লাখ টাকার মতো। প্রায় ৬০০ ভরি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, গোল্ডেন মনিরের অটোকার সিলেকশনের শোরুম রয়েছে। তবে আমদানি নিষিদ্ধ পাঁচটি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে তার। যার প্রতিটির মূল্য তিন কোটি টাকা করে। গাড়িগুলো দুটি বাসায় রাখেন ও তিনটি শোরুমে রাখেন। পাশাপাশি গাউসিয়াতে একটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে।
র্যাব গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছে। এগুলো আনুষ্ঠানিক তদন্তের জন্য দুদক, বিআরটিএ, মানি লন্ডারিংয়ের জন্য সিআইডি এবং ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার বিষয়ে এনবিআরকে তদন্তের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানাবে র্যাব।
র্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন মনির ১০-১৫ বছর ধরে একটি রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতা করে আসছিল। ওই দলের যেসব নেতা আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন তার কাছ থেকে তাদেরও খোঁজ করা হচ্ছে। গ্রেফতার মনিরকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।