০৬:১৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্রাইসিসের সুযোগে বিরোধী দল পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে : প্রধানমন্ত্রী

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৯:১০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২
  • / ১৫৮৫ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ক্রান্তিকালের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল রাজনৈতিক পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু সম্পূরক প্রশ্নে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে। দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছেন আমি সকলের কথা বলছি- তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা কী সমীচীন হচ্ছে? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। আজকে সারা বিশ্বব্যাপী ক্রাইসিস- এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা আর ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্ট করা-এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না। নিজের থেকে পাশে দাড়াঁতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়ন করি কোন এলাকাটা আমাদের ভোট দিলো বেশি আর কোন এলাকা দিলো না, সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুঠ চাল দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি। আমরা সবসময়ে ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এর আগে শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুদ্ধের ভয়ারহতা ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবেন। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলেছি। শুধু সতর্ক নয়, সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি।

তিনি বলেন, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাব। খাদ্য উৎপাদন করব। বাংলাদেশ পারে অনেক ক্ষেত্রে এটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কেবল আমরা নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহনের জন্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম যুদ্ধের কারণে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমন কী এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং নিয়েছি।

গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সাথে স্যাংশন। এই স্যাংশন দেয়ার ফলে বিশ্ববাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। শুধু বাংলাদেশ নয়। বরং বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনো পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি। ইউরোপ, আমেরিকা গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব জায়গায় লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সব কিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি। সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যহত রাখতে হবে। বার বার বলছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যখন সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব, মূল্যস্ফীতি তখন আমাদের দেশে নিজেদের মাটি ও মানুষ নিয়ে চলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।

বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এজন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের সাথে সাথে খোঁজা হয়, ধরা হয়। ইতোমধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সব সময় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। পণ্য লুকিয়ে রেখে যারা মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলমান থাকবে।

প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের উপাত্তের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির রুমিন ফারহানা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে। এবং সেইসব লোকের কথাই মাননীয় সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি নিয়েছেন তার মধ্যে একটা পত্রিকা কিন্তু আমি কখনো পড়ি না। পড়ি না এই কারণে, তারা সবসময় উল্টো দিকে থাকে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক এরা কখনো তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। পছন্দ করে এইজন্য যে, তাদের একটু ভাল হয়। কোনো রকম কদর বাড়ে সেজন্য। আর যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানটি কোন জায়গা থেকে হিসাব পায় জানি না। এই হিসাব তাদের কখনোই সঠিক হিসাব হয় না।

তিনি বলেন, আজকে সারাবিশ্বে যেভাবে পণ্যমূল্য বেড়েছে সেটা যদি দেখেন, সে তুলনায় বাংলাদেশে …বাংলাদেশেতো দাম বেড়েছে আমিতো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই না আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প মূল্যে যারা ক্রয় করার সক্ষমতা রাখে না তাদের দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেডলাইন দিয়েছে, সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটা দেশ থেকে ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিকর। ভেতরে জাতি দেখুক, সেটা সঠিক না। সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।

সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানটির কথা উনি (রুমিন) উল্লেখ করেছেন সে প্রতিষ্ঠানতো, কোনো কিছুই ভালো লাগে না তাদের। তাদের ভালো লাগে কখন, যখন সেনাশাসন ছিল। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তাদের একটু কদর বাড়ত। এই আশায় তারা বসে থাকে, এটাই বাস্তবতা।

তিনি বলেন, দেশের মনুষের দুঃখ কষ্ট লাগবে যা যা করণীয় আমাদের সাধ্যমত করে যাব। পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য, যুদ্ধ এবং স্যাংশনের জন্য প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যুদ্ধ বন্ধ করার কথা আমি জাতিসংঘেও বলে এসেছি।

তিনি বলেন, অনেকে বলে, এসব কথা বললে কোনো কোনো দেশ নারাজ হবে। কে নারাজ হল জানি না। সারা বিশ্বের মানুষ ভুক্তভোগী। ইংল্যান্ডে বহুমানুষের কয়েক মাস মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তিন বেলা খাবার খেতে পারে না। আমেরিকায় দারিদ্র বেড়ে গেছে। খাবার পাচ্ছে না, থাকার ঘর নেই, রোগের চিকিৎসা নেই। গৃহহীন মানুষের ভিড়। ইউরোপের অবস্থাও এ ধরনের। শীত এসে যাচ্ছে, তারা গরম পানি পাচ্ছে না।

শেখ হাসিনা বলেন, এই যখন বিশ্বব্যাপী অবস্থা। বাংলাদেশের জনগণের জন্য কী করা যায়, সংসদ সদস্য হিসেবে সেটাই করা উচিত। আর যে পত্রিকা আর যে প্রতিষ্ঠান, ওই প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আমার খুব ভালো চেনা আছে। আমাদের মতিয়া আপা নাম দিয়েছেন। আসল নাম বাদ দিয়ে বলেছেন ‘সেনাপ্রিয়’। অর্থাৎ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে, মূল্য বাড়ে, এটাই বাস্তবতা। আমরা জনগণের পাশে আছি জনগণের সাথে থাকব। তারা যেটা বলছে বলতে দিন। আমি যা আমার কাজ করার সেটা আমি করে যাব।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার চরম আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য দেশের জনসাধারণের জীবনমান স্বাভাবিক রাখতে ও দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ক্রাইসিসের সুযোগে বিরোধী দল পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে : প্রধানমন্ত্রী

আপডেট সময় : ০৯:১০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ নভেম্বর ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ক্রান্তিকালের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল রাজনৈতিক পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু সম্পূরক প্রশ্নে বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দায় সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনো পরিকল্পনা আছে কি-না জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে। দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছেন আমি সকলের কথা বলছি- তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায় সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা কী সমীচীন হচ্ছে? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। আজকে সারা বিশ্বব্যাপী ক্রাইসিস- এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা আর ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্ট করা-এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না। নিজের থেকে পাশে দাড়াঁতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়ন করি কোন এলাকাটা আমাদের ভোট দিলো বেশি আর কোন এলাকা দিলো না, সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুঠ চাল দিয়ে বা হাত দিয়ে পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি। আমরা সবসময়ে ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

এর আগে শেখ হাসিনা আরও বলেন, যুদ্ধের ভয়ারহতা ও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমি খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এভাবে কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবেন। ভয় নয়, মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটা বলেছি। শুধু সতর্ক নয়, সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেছি।

তিনি বলেন, আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাব। খাদ্য উৎপাদন করব। বাংলাদেশ পারে অনেক ক্ষেত্রে এটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি। সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, কেবল আমরা নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহনের জন্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম যুদ্ধের কারণে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমন কী এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং নিয়েছি।

গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেই সাথে স্যাংশন। এই স্যাংশন দেয়ার ফলে বিশ্ববাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। শুধু বাংলাদেশ নয়। বরং বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে এখনো পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি। ইউরোপ, আমেরিকা গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব জায়গায় লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সব কিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি। সবার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যহত রাখতে হবে। বার বার বলছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যখন সারা বিশ্বব্যাপী খাদ্যের অভাব, মূল্যস্ফীতি তখন আমাদের দেশে নিজেদের মাটি ও মানুষ নিয়ে চলার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছি।

বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এজন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের সাথে সাথে খোঁজা হয়, ধরা হয়। ইতোমধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সব সময় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। পণ্য লুকিয়ে রেখে যারা মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলমান থাকবে।

প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের উপাত্তের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির রুমিন ফারহানা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে। এবং সেইসব লোকের কথাই মাননীয় সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি নিয়েছেন তার মধ্যে একটা পত্রিকা কিন্তু আমি কখনো পড়ি না। পড়ি না এই কারণে, তারা সবসময় উল্টো দিকে থাকে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক এরা কখনো তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। পছন্দ করে এইজন্য যে, তাদের একটু ভাল হয়। কোনো রকম কদর বাড়ে সেজন্য। আর যে প্রতিষ্ঠানটির কথা বলেছেন, এই প্রতিষ্ঠানটি কোন জায়গা থেকে হিসাব পায় জানি না। এই হিসাব তাদের কখনোই সঠিক হিসাব হয় না।

তিনি বলেন, আজকে সারাবিশ্বে যেভাবে পণ্যমূল্য বেড়েছে সেটা যদি দেখেন, সে তুলনায় বাংলাদেশে …বাংলাদেশেতো দাম বেড়েছে আমিতো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই না আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্প মূল্যে যারা ক্রয় করার সক্ষমতা রাখে না তাদের দিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হেডলাইন দিয়েছে, সব দেশের থেকে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বেশি। কিন্তু ভেতরে যে ডাটা দিয়েছে সেখানে বাংলাদেশ হিসাবে আসে না। বাংলাদেশ কয়েকটা দেশ থেকে ভালো অবস্থায় আছে। এরা কারসাজিটা এভাবেই করে। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কিছু কিছু পত্রিকা এখন এমনভাবে একটা হেডলাইন করে যা বিভ্রান্তিকর। ভেতরে জাতি দেখুক, সেটা সঠিক না। সঠিক তথ্য তারা দেয় না। বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেয়।

সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানটির কথা উনি (রুমিন) উল্লেখ করেছেন সে প্রতিষ্ঠানতো, কোনো কিছুই ভালো লাগে না তাদের। তাদের ভালো লাগে কখন, যখন সেনাশাসন ছিল। যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল তাদের একটু কদর বাড়ত। এই আশায় তারা বসে থাকে, এটাই বাস্তবতা।

তিনি বলেন, দেশের মনুষের দুঃখ কষ্ট লাগবে যা যা করণীয় আমাদের সাধ্যমত করে যাব। পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য, যুদ্ধ এবং স্যাংশনের জন্য প্রত্যেক জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যুদ্ধ বন্ধ করার কথা আমি জাতিসংঘেও বলে এসেছি।

তিনি বলেন, অনেকে বলে, এসব কথা বললে কোনো কোনো দেশ নারাজ হবে। কে নারাজ হল জানি না। সারা বিশ্বের মানুষ ভুক্তভোগী। ইংল্যান্ডে বহুমানুষের কয়েক মাস মাংস কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই। তিন বেলা খাবার খেতে পারে না। আমেরিকায় দারিদ্র বেড়ে গেছে। খাবার পাচ্ছে না, থাকার ঘর নেই, রোগের চিকিৎসা নেই। গৃহহীন মানুষের ভিড়। ইউরোপের অবস্থাও এ ধরনের। শীত এসে যাচ্ছে, তারা গরম পানি পাচ্ছে না।

শেখ হাসিনা বলেন, এই যখন বিশ্বব্যাপী অবস্থা। বাংলাদেশের জনগণের জন্য কী করা যায়, সংসদ সদস্য হিসেবে সেটাই করা উচিত। আর যে পত্রিকা আর যে প্রতিষ্ঠান, ওই প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আমার খুব ভালো চেনা আছে। আমাদের মতিয়া আপা নাম দিয়েছেন। আসল নাম বাদ দিয়ে বলেছেন ‘সেনাপ্রিয়’। অর্থাৎ অস্বাভাবিক একটা পরিস্থিতিতে তাদের একটু দাম বাড়ে, মূল্য বাড়ে, এটাই বাস্তবতা। আমরা জনগণের পাশে আছি জনগণের সাথে থাকব। তারা যেটা বলছে বলতে দিন। আমি যা আমার কাজ করার সেটা আমি করে যাব।

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার চরম আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য দেশের জনসাধারণের জীবনমান স্বাভাবিক রাখতে ও দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।