কিছু এলাকার পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি
- আপডেট সময় : ১১:৫৯:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ জুলাই ২০২০
- / ১৫১৬ বার পড়া হয়েছে
কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, পাবনা ও নেত্রকোনার কিছু এলাকার পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। বেশিরভাগ নদ-নদীর পানি এখনো বিপদসীমার উপরে। ফলে বানভাসীদের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। এদিকে, যমুনার পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় অব্যাহত রয়েছে নদীভাঙন।
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলার পানি কমতে শুরু করায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকার ঘর-বাড়ি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় দুর্ভোগ কমেনি বানভাসীদের। ত্রাণ স্বল্পতার কারণে এসব এলাকায় খাদ্য সংকট বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকা পরিবারগুলো পাকা সড়ক ও উঁচু বাধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় সংকট চলছে গো খাদ্যেরও। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
সিরাজগঞ্জে গত তিনদিন ধরে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনও তা বিপদসীমার ওপর দিয়েই বইছে। এতে টানা ৯ দিন যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার বন্যা কবলিত সিরাজগঞ্জ সদর,কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর এই ৫টি উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের শতশত গ্রামের বানভাসি মানুষের বাড়ী ঘরের পানি যেমন ছিলো,এখনও তাই রয়েছে। সেই কারনে ৫ উপজেলার পানিবন্দি দেড় লক্ষাধিক মানুষ,বাঁধ,উঁচু জায়গা ও স্কুল ঘর বারিন্দায় আশ্রয় নেয়া বন্যা দুর্গত মানুদের দুর্ভোগ বেড়েই চললেও চলতি বন্যায় বানভাসী মানুষদের এখন পযন্ত সরকারী-বেসরকারীভাবে ত্রাণ বিতরণ বা সহযোগিতা করতে দেখা যাচ্ছে না।
উজানে যমুনার নদীর পানি কমলেও ভাটি অঞ্চলে ব্রক্ষ্মপূত্র ও ঝিনাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনার পানি ২৫ সেন্টিমিটার কমে আজ সকালে বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলায় ৭ টি উপজেলার ৪৯ টি ইউনিয়নের ৩৯১ গ্রামের ও ৮টি পৌরসভার ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৯৭ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এতে করে ৬ হাজার ৬৬২টি ঘরবাড়ি বিনষ্ট হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে ও সাপের কামড়ে এখন পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি অপরর্তিতি রয়েছে। নদী ভাঙ্গনে কবলে পরছে যমুনা নদী পাড়রে মানুষ। জেলার ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর ও নাগরপুরে ইতোমধ্যে শতাধকি পরিবার নদী ভাঙ্গনরে স্বীকার হয়েছেন। ভাঙ্গন কবলতি এলাকা পরর্দিশণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সব রকমরে সহযোগীতার আশ্বাস দয়িছেনে জেলা প্রশাসক।
গত ২৪ ঘন্টায় আরিচা যমুনা পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। অপরদিকে সকাল ৯টার দিকে পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মানিকগঞ্জে পানি কমলেও অভ্যন্তরীন নদী তীরে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙ্গন থামানো যাচ্ছে না।
মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এরই মধ্যে নতুন করে শিবচরের ৩ ইউনিয়নের অন্তত কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত মানুষ। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে বন্দরখোলা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর পাশের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, হাট-বাজারসহ বহু স্থাপনা। ইতোমধ্যে পদ্মা নদীবেষ্টিত বিস্তীর্ণ জনপদ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবল আক্রোশে ভাঙন শুরু হয়েছে পদ্মায়। এরই মাঝে নদী ভাঙ্গনের ফলে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার। পানিবন্দি হয়ে পড়া ৫শতাধিক মানুষ ও নদী ভাঙ্গনের ফলে অনেক পরিবার বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব তারা এখন খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হোসেন জানায়, কয়েক দিন বাড়ার পরে আবার কমতে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। সোমবার সকালে যমুনা নদীর পানি নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপদ সীমার ০৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপদ সীমার ২. ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, নেত্রকোণায় পানি বৃদ্ধি অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে বারহাট্টা, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় শতাধিক গ্রামের ১০ হাজার পরিবার এখনো পানিবন্ধি রয়েছে। পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি পানি বন্ধি মানুষের। অনেক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে মাছ চাষীরা। এতে করে বিপাকে সাধারণ মানুষ।