চিকিৎসার জন্য নিজের বাড়ী বিক্রি করে দিয়েছিলেন বাংলাগানের প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর
- আপডেট সময় : ০১:৩২:৫৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুলাই ২০২০
- / ১৫১৩ বার পড়া হয়েছে
চিকিৎসা শেষে গানের ভুবনে ফেরার আশায় শেষ পর্যন্ত নিজের বাড়ীও বিক্রি করে দিয়েছিলেন বাংলাগানের প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। ব্যক্তিজীবনে নানা অপূর্ণতা আর কষ্ট নিয়ে নীরব অভিমানেই চলে গেলেন তিনি। গানের মতোই জীবনের গল্পে যা কিছু দেখার ও শোনার, তার সম আরয় বাকি থাকলো না। যাদুকরী কণ্ঠ হলেও কখনো বেতার ও টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন না তিনি। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এন্ড্রু কিশোর সারাজীবন কেবল সিনেমার প্লে-ব্যাক এবং স্টেজ শো’ দিয়েই মাতিয়ে রেখেছিলেন ভক্তদেরকে।
সত্যি… শতচেষ্টা করেও আর কোনো বাঁধনেই আটকানো গেল না বাংলাগানের রাজপুত্র এন্ড্রু কিশোরকে। পৃথিবীর সব মায়াবন্ধন ছিন্ন করে হারিয়ে গেলেন চিরতরে। জীবনে শেষদিনগুলোতে বেছে নিয়েছিলেন নিঃসঙ্গতা। বলেছিলেন, পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কেউ যেন যোগাযোগ না করেন। এমন কি কথা বলেন নি ফোনেও। নিশ্চিত মৃত্যুর পথযাত্রী জেনেও… কী এমন গাঢ় অভিমানে সবকিছু থেকে আড়াল করে নিয়েছিলেন নিজেকে?
সুরের ভুবনে কোনো অপ্রাপ্তিই বাধা হয়ে আটকাতে পারে নি কণ্ঠের যাদুকর কিশোরকে। তাই ১৫হাজারেরও বেশি গান নিজের কণ্ঠে তুলেছিলেন এই প্লেব্যাক সম্রাট। কিশোরের ভরাট কণ্ঠের মাদকতা সমাতালে মাতিয়ে রেখেছে অন্তত তিন প্রজন্মকে। এমন খ্যাতির চূঁড়া ছুঁয়ে থাকলেও তাঁর বুকের ভেতরে একটা গভীর ক্ষত ছিল আজীবনই। স্বাধীনচেতা এই সুরের পাখি বেতার বা টেলিভিশনের রীতি মেনে কখনো অডিশন দিতে যান নি। তাই তালিকাভুক্ত শিল্পীর খাতায় নাম ওঠেনি তাঁর।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জীবনের সব সঞ্চয়ই যখন শেষ, তখন তাঁকে হারাতে হয় নীড়ের ঠিকানাও। রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকার এই অ্যাপার্টমেন্টে থাকা শখের ফ্ল্যাটটিও বিক্রি করতে হয়েছিল। এরপরও চিকিৎসার টাকার সংকুলান হয় নি। তাঁর শেষ ইচ্ছে ছিল- জন্মস্থানেই যেন মৃত্যু হয়। তাই সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকা হয়ে রাজশাহীতে ফিরে উঠেছিলেন বোনের বাসায়।
সঙ্গীতজীবনে শ্রেষ্ঠ আসনটি ধরে রাখলেও কখনো ভুলে যান নি বাল্যকালের গানের ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুকে। তাই ওস্তাদের মৃত্যুর পর কিশোর ব্যক্তি উদ্যোগেই রাজশাহীতে বাচ্চুর নামে প্রতিষ্ঠা করেন গানের সংগঠন। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্স পাস করে ঢাকায় পাড়ি জমান সুরের ভুবনে ঝড় তুলতে। গান গেয়েই তিনি আটবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। গত ৬ জুলাই ৬৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই গুণীশিল্পী ।