০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

এনবিআর কি মারা গেল নাকি আত্মহত্যা করলো?

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৭:৪৬:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • / ১৫২১ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

বাংলাদেশের অর্ধ-শতাব্দীকালেরও বেশী বয়সী দাপুটে প্রতিষ্ঠান- এনবিআর কি আসলে মারা গেলো, নাকি আত্মহত্যা করলো, তার পোস্টমর্টেম খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তাদের অনেকেই এখন গোস্বা করছেন, ধর্মঘটে যাচ্ছেন কিন্তু রহস্যভেদ করছেন না।বাংলাদেশ আসলে দর্শনের দেশ। যারা এটা বুঝেছেন তারাই সফল হয়েছেন।

ঝিয়ের পেটে তো মায়ের জন্ম হতে পারে না। স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি বড় হতে পারে না। সংসদের কাজ এনবিআর করতে পারে না। অথচ সে তাই করে আসছিল। আর ভাবছিল, তারা কত বড়, কত জ্ঞানী, কত ক্ষমতাবান, যোগ্য ও মহৎ! এই ক’দিন আগেও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাকে তারা তথাকথিত কর ফাঁকির অভিযোগে কম নাকানিচুবানি খাওয়ায়নি। তাকে ট্যাক্স বুঝিয়ে একেবারে গলাধঃকরণ করিয়ে ছেড়েছে। যেন মানুষ নয়– ট্যাক্সই বড়, ট্যাক্সই আসল এবং ট্যাক্সের জন্যই এদেশে মানুষের জন্মগ্রহণ। কিন্তু সে বোঝেনি, ”তোমারে বধিবে যে, গোকূলে বাড়িছে সে।” ব্রিটেনের রাজারাও একসময় এরকমই বুঝতেন। তারপর সংসদ, মানে জনগণ একদিন রাজাকে ধরে এমন প্যাদানি দিলো যে, সংসদের সাথে যুদ্ধে রাজা পরাস্ত হয়ে গণতন্ত্রের জন্ম দিলে রাজতন্ত্রই অবশেষে খতম হয়ে গেলো। আর গণতন্ত্রে ট্যাক্স নির্ধারণের ক্ষমতা পেলো খোদ জনগণ বা তাদের প্রতিনিধিত্ব সংসদ। সেজন্য গণতন্ত্রের অন্যতম প্রবাদ বাক্য হচ্ছে- ”নো ট্যাক্সেশন উইদাউট রিপ্রেজেন্টেশন।”

এনবিআরের কাজ কর আদায় করা– কর নির্ধারণ নয়। এটা জনগণ, মানে সংসদেরই দায়িত্ব। কিন্তু গত অর্ধশতাব্দী ধরে এনবিআর কর নির্ধারণ ও আদায়—দুটোই একসাথে করে আসছিল। উপরন্তু জাতীয় বাজেটও বানিয়েছে। সৃষ্টিকর্তা এই বিশ্বে পৃথক সত্ত্বায় পুরুষ এবং নারী সৃষ্টি করেছেন। আবার তাদের যৌথ মিলনে প্রজন্ম রক্ষা করছেন। কিন্তু তিনি তো পারতেন, পুরুষ ও নারীকে একটি সত্ত্বায় পরিণত করে একক মাধ্যমেই জন্মদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। কিন্তু তা না করে তিনি সব কিছুকেই বিভক্ত করেছেন এবং পৃথক পৃথক দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। এ থেকে আমরা কি শিখবো?

এনবিআর বাজেট বানাতে গিয়ে জিডিপিটা দারুণ শিখেছে। বাজেট কি? বাজেট মানে হচ্ছে জিডিপি বড় করা। বাজেটের উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্যও হচ্ছে জিডিপি বড় করা। জিডিপি বড় হলে কি হয়? বাজেট বড় করা যায়। বাজেট বড় হলে কি হয়? বৈধ-অবৈধ দু’পথেই বেশী বেশী লুটপাট করা যায়। বাজেট তো আসলে লুটপাটেরই দলিল। মহামহিম রাণীকেও তারা এটা বুঝিয়ে ছেড়েছে। তারপর রানি খুশিতে গদগদ হয়ে দ্রুত জিডিপি বড় করার হুকুম জারি করেছেন। কিন্তু রানি যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন তার দেশে ট্যাক্স-জিডিপির হার ছিল ১৪%। আর কথিত ”বিপুল উন্নয়নে”র পর, জিডিপি প্রায় ৩ গুণ বড় করার পর এবং রাণীর ক্ষমতা ছাড়ার কালে সেই ট্যাক্স-জিডিপির হার দাঁড়ায় ৭%। এ কীভাবে সম্ভব? এতো সেই হোজ্জার বিড়ালের মতো। ”বিড়াল যদি দু’কেজি হয়- মাংস গেলো কই, আর মাংস যদি দু’কেজি হয় তো বিড়াল গেলো কই?” আজ এনবিআর জাতিকে বাকী মাংস বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যাই করেছে। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৭% হলে সেই দেশ কীভাবে মধ্য-আয়ের দেশ হয়? এনবিআর জিডিপি বড় করতে পারে, কিন্তু ট্যাক্স কেন বড় করতে পারে না? আসলে জিডিপি হচ্ছে কাল্পনিক। আর ট্যাক্স হচ্ছে বাস্তবতা। জিডিপি যেহেতু জনগণের সম্পত্তি এবং এর হিসাব এনবিআর কিংবা সরকারের কাছে নেই। কারণ দেশের শতভাগ মানুষ যেহেতু প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর দেন না এবং সবার টিন ও ট্যাক্স রিটার্ন নেই, সেহেতু এনবিআরের কাছে জিডিপি’র প্রকৃত হিসাবও নেই। তাই এটাকেই হাতিয়ার বানিয়ে সে কাল্পনিকভাবে জিডিপিকে বড় করিয়ে দেখিয়েছে যাতে জনগণের উপর করের চাপ আরো বাড়ানো যায়। কিন্তু এটি যে একসময় ফুঁসে গেলে সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে এনবিআরই ফেঁসে যেতে পারে, সেটা বুঝতে পারেনি। কথা আরো আছে। এনবিআরের তরফে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, এদেশের বড়লোকেরা যথাযথভাবে কর দেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এদেশে বড়লোক কে? ৫ আগস্টের পর জনগণ দেখলো, এদেশে যাদের বড়লোক বলে জাহির করা হয় তারা প্রায় সবাই আসলে বিপুল ঋণখেলাপি ও ব্যাংক লুটেরা। সম্পদের চেয়ে তাদের দায় বেশী। জনগণের টাকা মেরেই তারা বেশিরভাগ বড়লোক। যে কারণে এদেশে জর্দা-ব্যবসায়ী কাউছ মিয়াই বছরের পর বছর ধরে ছিলেন সর্বোচ্চ করদাতা।

আসলে এনবিআর মারা যায়নি, তাকে কেউ মেরেও ফেলেনি। মূলত ৫ আগস্টের পর আইএমএফের হাতে জোচ্চুরি ধরা পড়ায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। এখন তার দাফন হচ্ছে মাত্র। এনবিআর গলা ঝেড়ে বলতে পারেনি, এই জাতির ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৭% নয়। এটি কমপক্ষে ১৬%। বাংলাদেশ ট্যাক্সহেভেন বা করস্বর্গের দেশ নয়। এটি করজুলুমের দেশ। যারা কর দেন কিংবা আদায় করেন (ব্যবসায়ী/শিল্পপতি) তারা সেটা ভালো জানেন। বাংলাদেশের মানুষ কম কর দেন না। আসলে তাদের কর দেবার সক্ষমতাটাই তৈরী করতে পারেনি রাষ্ট্র বা জাতীয় বাজেট। তারপরেও এদেশের প্রতিটি মানুষ বিপুল পরোক্ষ করের পাশাপাশি সক্ষম অংশ ডাবল ট্যাক্স দেন। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী একদিকে দেন জাকাত, অন্যদিকে আয়কর। সংবিধানে দেয়া অধিকারের হিসেবে এদেশের ৮০% মানুষ এখনো দরিদ্র। ৪০ ভাগ চরম দরিদ্র। তার ওপর মূল্যস্ফীতি আর পরোক্ষ করভারে তারা আরো জর্জরিত। মূল্যস্ফীতিও তো আসলে এক ধরনের কর। একাত্তরের স্বাধীনতার ৫৫ বছরে এদেশের জনগণ মূল্যস্ফীতি ছাড়া বহুল আকাঙ্ক্ষার স্বাধীন রাষ্ট্র থেকে কিছুই পায়নি। অথচ এই দরিদ্র জনগণের কাঁধে করফাঁকি আর কর না দেবার দায় চাপানো হচ্ছে। তাকে অপমান করা হচ্ছে। তার সাথে এনবিআর মশকরা করছে। তারা নাকি জাতীয় আয়ের মাত্র ৭% কর দেয়। আসলেই জাতীয় আয় এতো বেশী হলে (মাথাপিছু মানে মাথার পেছনে ২৮শ’ ডলার) আর কর এতো কম (৭%) হলে তো এদেশ বিনিয়োগে ভরে যাবার কথা। বিদেশি বিনিয়োগেও থৈ থৈ করবে এদেশ। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? ১৯৭১-এর দেড়শ টাকা ভরির সোনা আজ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আট আনা (৫০ পয়সা) কেজির (সের) ইলিশ (জাতীয় মাছ) আজ ২ হাজার টাকা। বাহাত্তরের ৭৮৬ কোটি টাকার বিসমিল্লাহ বাজেটকে আজ ৮ লাখ কোটির মূল্যস্ফীতির এই নরকে এনে ফেলেছে। এর বড় অংশই মহামহিম রাণীমাতা আর তার এনবিআরের টানা ১৬ বছরের অবদান। ১৯৭২ সালে ৭৮৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ছিল তখনকার জিডিপির ১৮%। আজ ৮ লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট হচ্ছে হাসিনামিক্স জিডিপির ১১%। বাপ-বেটির পার্থক্য এটাই। তাহলে কোনটি বড় থাকলো? ১৯৭২-৭৪ সালেও বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশ ছিল। বাংলাদেশের তখনকার অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা সারা বিশ্ব জানে। হাসিনামিক্স বাংলাদেশকে আবার সেখানে নিয়ে যাবার জন্য ভারতীয় পরামর্শে এলডিসি থেকে মিথ্যা তথ্যে উত্তরণ দেখিয়ে তথাকথিত মধ্য-আয়ে উত্তীর্ণের (আসলে ফাঁদে ফেলার) টার্গেট দেন। কিন্তু ৭% ট্যাক্স-জিডিপির অর্থনীতি কখনো মধ্য-আয়ের দেশ হতে পারে না। এই দায় আজ এনবিআর হয়ত কথিত কর-আদায়ের ব্যর্থতা বলে আত্মহত্যা করে শোধ দিয়ে যাবে। কিন্তু জাতির ঘাড়ে দেড়শ’বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ, দুইশ’বিলিয়ন ডলার পাচার, নামে-বেনামে ৭ লক্ষ কোটি টাকার (দরিদ্র জনগণের তিলে তিলে জমানো অর্থ) ব্যাংকলুটের দায় কে পরিশোধ করবে? বাংলাদেশের ২০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপিকে ৪৬০ বিলিয়নে ফাঁপানো না হলে আজ এতো বড় দুরবস্থা যে তৈরি হতো না, তা হলফ করেই বলা যায়। ২০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপির এতো বিশাল ঋণ নেবার, তিনগুণ বেশী টাকা ছাপানোর, দ্বিগুণেরও বেশী বাজেট বানানোর ধারণ ক্ষমতা নেই। আবার ট্যাক্স-জিডিপির হারও এতে সঠিকভাবে (১৬%) প্রতিফলিত হতো। ফলে খাটো হতো দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি এবং আমলাতন্ত্রের আকার।
জিডিপি’র আকার ২০০ বিলিয়ন বা বড়জোর আড়াইশ বিলিয়ন ডলার ধরলে সবই পানির মতো মিলে যায়। কিন্তু গোল বাধে জোর করে সাড়ে ৪শ’ বিলিয়নে নিয়ে ঠেকালে। তখন কিছুই মেলে না। কিন্তু এনবিআর সেই সত্য উচ্চারণে আজ ব্যর্থ এ কারণে যে, ”সত্য কইলে মা মার খায়, না কইলে বাপে কুত্তা খায়”-এর মতো অবস্থা। বর্তমান চেয়ারম্যানকেও যখন আমি গত রমজানে এই প্রশ্ন করি তখন তিনি জবাব দেন, জিডিপির হিসাব বা প্রবৃদ্ধি আমরা কষি না। এটা বিবিএস কষে।” কিন্তু বাজেট কে বানায়, জিডিপি’র প্রক্ষেপণ কে দেয় অথবা বিবিএসের মিথ্যার প্রতিবাদ কেনই-বা তারা করেন না, সেটার জবাব তিনি এড়িয়ে যান। আসলে মিথ্যা পরিসংখ্যানের বয়ানে এনবিআর শুধু এ জাতির অতীত ও বর্তমানই ধ্বংস করেনি–ভবিষ্যতও ধ্বংস করেছে। মাথাপিছু ১ হাজার ডলারের জাতীয় আয়কে ২৮শ’ডলারের চমক তুলে মধ্য-আয়ের”মিথ্যা তকমা দিয়ে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও রপ্তানির পথও রুদ্ধ করেছে। যে কারণে চূড়ান্তভাবে মধ্য-আয়ের দেশে উঠলে ২০২৬ সালের পর দ্রুত বাজার হারানোর আশঙ্কায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের শূন্যতায় ২০০১-০৬ সালের ২০% এক্সপোর্ট-জিডিপি রেশিও এখন ১২%-এ নেমেছে। শিগগিরই এটি আরো কমে গিয়ে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়বে।

একটি জাতির অর্ধ-শতাব্দীকালের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউটের পতন ঘটা কোনো সুখকর বা গর্বের বিষয় নয়। এটা জাতীয় লজ্জা। এনবিআর ভেঙ্গে দুইভাগ করাও কোনো সমাধান নয়। এটা ”থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়ে”র মতোই ব্যাপার। নতুন এনবিআরের এক অংশ কর নির্ধারণ করবে, আর আরেক অংশ আদায় করবে– এটাও সঠিক নয়। এতে কেবল আমলাদের চেয়ার বাড়বে এবং জাতির কাঁধে খরচের বোঝা বাড়বে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে সংসদ বা জনপ্রতিনিধিত্ব ছাড়া কর নির্ধারণের ম্যান্ডেট অন্য কারো নেই। বাজেট বানানোও তাদের দায়িত্ব– যারা কর নির্ধারণের ক্ষমতাবান। স্বাধীনতার ৫৫ বছরেও যে সংসদের বাজেট বানানোর সক্ষমতা থাকে না, সেই সংসদ লইয়া জাতি কি করিবে- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের আগামী দিনের বাজেট হতে হবে ততটুকুই, যতোটুকু এক বছরে কর আদায় সম্ভব হবে। দেশি-বিদেশি ঋণে বাজেট বানানোর যুগ শেষ। দেশের ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ১ টাকা ঋণও আর নয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাঁধে আর কোনো ঋণের দায় নয়। যাদের যতটুকু উন্নয়ন সক্ষমতা থাকবে তাদের টাকায় ততটুকুই হবে। বরং জাতীয় বাজেট থেকে অন্তত এক-চতুর্থাংশ প্রতিবছর সরকারকে ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ হিসেবে ইনজেক্ট করতে হবে। যা থেকে তরুণ প্রজন্ম প্রথম দফায় বিনা সুদে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তায় পরিণত হবে। এটা তাদের অধিকার। আমাদের ভুলে যেতে হবে, বুকিস্ট ইকনোমিস্টদের বানানো সেই কাস্টমাইজ তত্ত্ব ”রাষ্ট্রের বাজেট হতে হয়- আগে ব্যয় নির্ধারণ করে।” এ এক ডাহা মিথ্যা। রাষ্ট্রের বাজেটও হতে হবে পরিবারের বাজেটের মতোই। আগে আয় ঠিক করা, তারপরে ব্যয় নির্ধারণ। আয়ের জন্য ট্যাক্স নির্ধারণে বছরব্যাপী সংসদে আলোচনা ও বিতর্ক হতে হবে। জাতির ট্যাক্স দেয়ার সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে। পরোক্ষ কর পুরোপুরি তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আলোচনা-সমালোচনা হতে হবে গণমাধ্যমেও। মনে রাখতে হবে বাজেট মানে কেবল কিছু কল্পনার ফানুস উড়ানো কিংবা পরিসংখ্যান নয়। কারণ পরিসংখ্যান হচ্ছে নারীর বিকিনীর মতো– সে যা প্রকাশ করে তা গৌণ, যা ঢেকে রাখে সেটাই মুখ্য।

লেখক: সালাহউদ্দীন আহমদ বাবলু, গণমাধ্যমকর্মী।

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

এনবিআর কি মারা গেল নাকি আত্মহত্যা করলো?

আপডেট সময় : ০৭:৪৬:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

বাংলাদেশের অর্ধ-শতাব্দীকালেরও বেশী বয়সী দাপুটে প্রতিষ্ঠান- এনবিআর কি আসলে মারা গেলো, নাকি আত্মহত্যা করলো, তার পোস্টমর্টেম খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তাদের অনেকেই এখন গোস্বা করছেন, ধর্মঘটে যাচ্ছেন কিন্তু রহস্যভেদ করছেন না।বাংলাদেশ আসলে দর্শনের দেশ। যারা এটা বুঝেছেন তারাই সফল হয়েছেন।

ঝিয়ের পেটে তো মায়ের জন্ম হতে পারে না। স্রষ্টার চেয়ে সৃষ্টি বড় হতে পারে না। সংসদের কাজ এনবিআর করতে পারে না। অথচ সে তাই করে আসছিল। আর ভাবছিল, তারা কত বড়, কত জ্ঞানী, কত ক্ষমতাবান, যোগ্য ও মহৎ! এই ক’দিন আগেও বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাকে তারা তথাকথিত কর ফাঁকির অভিযোগে কম নাকানিচুবানি খাওয়ায়নি। তাকে ট্যাক্স বুঝিয়ে একেবারে গলাধঃকরণ করিয়ে ছেড়েছে। যেন মানুষ নয়– ট্যাক্সই বড়, ট্যাক্সই আসল এবং ট্যাক্সের জন্যই এদেশে মানুষের জন্মগ্রহণ। কিন্তু সে বোঝেনি, ”তোমারে বধিবে যে, গোকূলে বাড়িছে সে।” ব্রিটেনের রাজারাও একসময় এরকমই বুঝতেন। তারপর সংসদ, মানে জনগণ একদিন রাজাকে ধরে এমন প্যাদানি দিলো যে, সংসদের সাথে যুদ্ধে রাজা পরাস্ত হয়ে গণতন্ত্রের জন্ম দিলে রাজতন্ত্রই অবশেষে খতম হয়ে গেলো। আর গণতন্ত্রে ট্যাক্স নির্ধারণের ক্ষমতা পেলো খোদ জনগণ বা তাদের প্রতিনিধিত্ব সংসদ। সেজন্য গণতন্ত্রের অন্যতম প্রবাদ বাক্য হচ্ছে- ”নো ট্যাক্সেশন উইদাউট রিপ্রেজেন্টেশন।”

এনবিআরের কাজ কর আদায় করা– কর নির্ধারণ নয়। এটা জনগণ, মানে সংসদেরই দায়িত্ব। কিন্তু গত অর্ধশতাব্দী ধরে এনবিআর কর নির্ধারণ ও আদায়—দুটোই একসাথে করে আসছিল। উপরন্তু জাতীয় বাজেটও বানিয়েছে। সৃষ্টিকর্তা এই বিশ্বে পৃথক সত্ত্বায় পুরুষ এবং নারী সৃষ্টি করেছেন। আবার তাদের যৌথ মিলনে প্রজন্ম রক্ষা করছেন। কিন্তু তিনি তো পারতেন, পুরুষ ও নারীকে একটি সত্ত্বায় পরিণত করে একক মাধ্যমেই জন্মদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। কিন্তু তা না করে তিনি সব কিছুকেই বিভক্ত করেছেন এবং পৃথক পৃথক দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। এ থেকে আমরা কি শিখবো?

এনবিআর বাজেট বানাতে গিয়ে জিডিপিটা দারুণ শিখেছে। বাজেট কি? বাজেট মানে হচ্ছে জিডিপি বড় করা। বাজেটের উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্যও হচ্ছে জিডিপি বড় করা। জিডিপি বড় হলে কি হয়? বাজেট বড় করা যায়। বাজেট বড় হলে কি হয়? বৈধ-অবৈধ দু’পথেই বেশী বেশী লুটপাট করা যায়। বাজেট তো আসলে লুটপাটেরই দলিল। মহামহিম রাণীকেও তারা এটা বুঝিয়ে ছেড়েছে। তারপর রানি খুশিতে গদগদ হয়ে দ্রুত জিডিপি বড় করার হুকুম জারি করেছেন। কিন্তু রানি যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেন তখন তার দেশে ট্যাক্স-জিডিপির হার ছিল ১৪%। আর কথিত ”বিপুল উন্নয়নে”র পর, জিডিপি প্রায় ৩ গুণ বড় করার পর এবং রাণীর ক্ষমতা ছাড়ার কালে সেই ট্যাক্স-জিডিপির হার দাঁড়ায় ৭%। এ কীভাবে সম্ভব? এতো সেই হোজ্জার বিড়ালের মতো। ”বিড়াল যদি দু’কেজি হয়- মাংস গেলো কই, আর মাংস যদি দু’কেজি হয় তো বিড়াল গেলো কই?” আজ এনবিআর জাতিকে বাকী মাংস বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যাই করেছে। ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৭% হলে সেই দেশ কীভাবে মধ্য-আয়ের দেশ হয়? এনবিআর জিডিপি বড় করতে পারে, কিন্তু ট্যাক্স কেন বড় করতে পারে না? আসলে জিডিপি হচ্ছে কাল্পনিক। আর ট্যাক্স হচ্ছে বাস্তবতা। জিডিপি যেহেতু জনগণের সম্পত্তি এবং এর হিসাব এনবিআর কিংবা সরকারের কাছে নেই। কারণ দেশের শতভাগ মানুষ যেহেতু প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর দেন না এবং সবার টিন ও ট্যাক্স রিটার্ন নেই, সেহেতু এনবিআরের কাছে জিডিপি’র প্রকৃত হিসাবও নেই। তাই এটাকেই হাতিয়ার বানিয়ে সে কাল্পনিকভাবে জিডিপিকে বড় করিয়ে দেখিয়েছে যাতে জনগণের উপর করের চাপ আরো বাড়ানো যায়। কিন্তু এটি যে একসময় ফুঁসে গেলে সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে এনবিআরই ফেঁসে যেতে পারে, সেটা বুঝতে পারেনি। কথা আরো আছে। এনবিআরের তরফে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, এদেশের বড়লোকেরা যথাযথভাবে কর দেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এদেশে বড়লোক কে? ৫ আগস্টের পর জনগণ দেখলো, এদেশে যাদের বড়লোক বলে জাহির করা হয় তারা প্রায় সবাই আসলে বিপুল ঋণখেলাপি ও ব্যাংক লুটেরা। সম্পদের চেয়ে তাদের দায় বেশী। জনগণের টাকা মেরেই তারা বেশিরভাগ বড়লোক। যে কারণে এদেশে জর্দা-ব্যবসায়ী কাউছ মিয়াই বছরের পর বছর ধরে ছিলেন সর্বোচ্চ করদাতা।

আসলে এনবিআর মারা যায়নি, তাকে কেউ মেরেও ফেলেনি। মূলত ৫ আগস্টের পর আইএমএফের হাতে জোচ্চুরি ধরা পড়ায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। এখন তার দাফন হচ্ছে মাত্র। এনবিআর গলা ঝেড়ে বলতে পারেনি, এই জাতির ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৭% নয়। এটি কমপক্ষে ১৬%। বাংলাদেশ ট্যাক্সহেভেন বা করস্বর্গের দেশ নয়। এটি করজুলুমের দেশ। যারা কর দেন কিংবা আদায় করেন (ব্যবসায়ী/শিল্পপতি) তারা সেটা ভালো জানেন। বাংলাদেশের মানুষ কম কর দেন না। আসলে তাদের কর দেবার সক্ষমতাটাই তৈরী করতে পারেনি রাষ্ট্র বা জাতীয় বাজেট। তারপরেও এদেশের প্রতিটি মানুষ বিপুল পরোক্ষ করের পাশাপাশি সক্ষম অংশ ডাবল ট্যাক্স দেন। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী একদিকে দেন জাকাত, অন্যদিকে আয়কর। সংবিধানে দেয়া অধিকারের হিসেবে এদেশের ৮০% মানুষ এখনো দরিদ্র। ৪০ ভাগ চরম দরিদ্র। তার ওপর মূল্যস্ফীতি আর পরোক্ষ করভারে তারা আরো জর্জরিত। মূল্যস্ফীতিও তো আসলে এক ধরনের কর। একাত্তরের স্বাধীনতার ৫৫ বছরে এদেশের জনগণ মূল্যস্ফীতি ছাড়া বহুল আকাঙ্ক্ষার স্বাধীন রাষ্ট্র থেকে কিছুই পায়নি। অথচ এই দরিদ্র জনগণের কাঁধে করফাঁকি আর কর না দেবার দায় চাপানো হচ্ছে। তাকে অপমান করা হচ্ছে। তার সাথে এনবিআর মশকরা করছে। তারা নাকি জাতীয় আয়ের মাত্র ৭% কর দেয়। আসলেই জাতীয় আয় এতো বেশী হলে (মাথাপিছু মানে মাথার পেছনে ২৮শ’ ডলার) আর কর এতো কম (৭%) হলে তো এদেশ বিনিয়োগে ভরে যাবার কথা। বিদেশি বিনিয়োগেও থৈ থৈ করবে এদেশ। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? ১৯৭১-এর দেড়শ টাকা ভরির সোনা আজ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আট আনা (৫০ পয়সা) কেজির (সের) ইলিশ (জাতীয় মাছ) আজ ২ হাজার টাকা। বাহাত্তরের ৭৮৬ কোটি টাকার বিসমিল্লাহ বাজেটকে আজ ৮ লাখ কোটির মূল্যস্ফীতির এই নরকে এনে ফেলেছে। এর বড় অংশই মহামহিম রাণীমাতা আর তার এনবিআরের টানা ১৬ বছরের অবদান। ১৯৭২ সালে ৭৮৬ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ছিল তখনকার জিডিপির ১৮%। আজ ৮ লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট হচ্ছে হাসিনামিক্স জিডিপির ১১%। বাপ-বেটির পার্থক্য এটাই। তাহলে কোনটি বড় থাকলো? ১৯৭২-৭৪ সালেও বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশ ছিল। বাংলাদেশের তখনকার অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা সারা বিশ্ব জানে। হাসিনামিক্স বাংলাদেশকে আবার সেখানে নিয়ে যাবার জন্য ভারতীয় পরামর্শে এলডিসি থেকে মিথ্যা তথ্যে উত্তরণ দেখিয়ে তথাকথিত মধ্য-আয়ে উত্তীর্ণের (আসলে ফাঁদে ফেলার) টার্গেট দেন। কিন্তু ৭% ট্যাক্স-জিডিপির অর্থনীতি কখনো মধ্য-আয়ের দেশ হতে পারে না। এই দায় আজ এনবিআর হয়ত কথিত কর-আদায়ের ব্যর্থতা বলে আত্মহত্যা করে শোধ দিয়ে যাবে। কিন্তু জাতির ঘাড়ে দেড়শ’বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ, দুইশ’বিলিয়ন ডলার পাচার, নামে-বেনামে ৭ লক্ষ কোটি টাকার (দরিদ্র জনগণের তিলে তিলে জমানো অর্থ) ব্যাংকলুটের দায় কে পরিশোধ করবে? বাংলাদেশের ২০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপিকে ৪৬০ বিলিয়নে ফাঁপানো না হলে আজ এতো বড় দুরবস্থা যে তৈরি হতো না, তা হলফ করেই বলা যায়। ২০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপির এতো বিশাল ঋণ নেবার, তিনগুণ বেশী টাকা ছাপানোর, দ্বিগুণেরও বেশী বাজেট বানানোর ধারণ ক্ষমতা নেই। আবার ট্যাক্স-জিডিপির হারও এতে সঠিকভাবে (১৬%) প্রতিফলিত হতো। ফলে খাটো হতো দুর্নীতি, মূল্যস্ফীতি এবং আমলাতন্ত্রের আকার।
জিডিপি’র আকার ২০০ বিলিয়ন বা বড়জোর আড়াইশ বিলিয়ন ডলার ধরলে সবই পানির মতো মিলে যায়। কিন্তু গোল বাধে জোর করে সাড়ে ৪শ’ বিলিয়নে নিয়ে ঠেকালে। তখন কিছুই মেলে না। কিন্তু এনবিআর সেই সত্য উচ্চারণে আজ ব্যর্থ এ কারণে যে, ”সত্য কইলে মা মার খায়, না কইলে বাপে কুত্তা খায়”-এর মতো অবস্থা। বর্তমান চেয়ারম্যানকেও যখন আমি গত রমজানে এই প্রশ্ন করি তখন তিনি জবাব দেন, জিডিপির হিসাব বা প্রবৃদ্ধি আমরা কষি না। এটা বিবিএস কষে।” কিন্তু বাজেট কে বানায়, জিডিপি’র প্রক্ষেপণ কে দেয় অথবা বিবিএসের মিথ্যার প্রতিবাদ কেনই-বা তারা করেন না, সেটার জবাব তিনি এড়িয়ে যান। আসলে মিথ্যা পরিসংখ্যানের বয়ানে এনবিআর শুধু এ জাতির অতীত ও বর্তমানই ধ্বংস করেনি–ভবিষ্যতও ধ্বংস করেছে। মাথাপিছু ১ হাজার ডলারের জাতীয় আয়কে ২৮শ’ডলারের চমক তুলে মধ্য-আয়ের”মিথ্যা তকমা দিয়ে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ও রপ্তানির পথও রুদ্ধ করেছে। যে কারণে চূড়ান্তভাবে মধ্য-আয়ের দেশে উঠলে ২০২৬ সালের পর দ্রুত বাজার হারানোর আশঙ্কায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের শূন্যতায় ২০০১-০৬ সালের ২০% এক্সপোর্ট-জিডিপি রেশিও এখন ১২%-এ নেমেছে। শিগগিরই এটি আরো কমে গিয়ে বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়বে।

একটি জাতির অর্ধ-শতাব্দীকালের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনস্টিটিউটের পতন ঘটা কোনো সুখকর বা গর্বের বিষয় নয়। এটা জাতীয় লজ্জা। এনবিআর ভেঙ্গে দুইভাগ করাও কোনো সমাধান নয়। এটা ”থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়ে”র মতোই ব্যাপার। নতুন এনবিআরের এক অংশ কর নির্ধারণ করবে, আর আরেক অংশ আদায় করবে– এটাও সঠিক নয়। এতে কেবল আমলাদের চেয়ার বাড়বে এবং জাতির কাঁধে খরচের বোঝা বাড়বে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে সংসদ বা জনপ্রতিনিধিত্ব ছাড়া কর নির্ধারণের ম্যান্ডেট অন্য কারো নেই। বাজেট বানানোও তাদের দায়িত্ব– যারা কর নির্ধারণের ক্ষমতাবান। স্বাধীনতার ৫৫ বছরেও যে সংসদের বাজেট বানানোর সক্ষমতা থাকে না, সেই সংসদ লইয়া জাতি কি করিবে- সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশের আগামী দিনের বাজেট হতে হবে ততটুকুই, যতোটুকু এক বছরে কর আদায় সম্ভব হবে। দেশি-বিদেশি ঋণে বাজেট বানানোর যুগ শেষ। দেশের ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ১ টাকা ঋণও আর নয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাঁধে আর কোনো ঋণের দায় নয়। যাদের যতটুকু উন্নয়ন সক্ষমতা থাকবে তাদের টাকায় ততটুকুই হবে। বরং জাতীয় বাজেট থেকে অন্তত এক-চতুর্থাংশ প্রতিবছর সরকারকে ব্যাংক খাতে বিনিয়োগ হিসেবে ইনজেক্ট করতে হবে। যা থেকে তরুণ প্রজন্ম প্রথম দফায় বিনা সুদে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তায় পরিণত হবে। এটা তাদের অধিকার। আমাদের ভুলে যেতে হবে, বুকিস্ট ইকনোমিস্টদের বানানো সেই কাস্টমাইজ তত্ত্ব ”রাষ্ট্রের বাজেট হতে হয়- আগে ব্যয় নির্ধারণ করে।” এ এক ডাহা মিথ্যা। রাষ্ট্রের বাজেটও হতে হবে পরিবারের বাজেটের মতোই। আগে আয় ঠিক করা, তারপরে ব্যয় নির্ধারণ। আয়ের জন্য ট্যাক্স নির্ধারণে বছরব্যাপী সংসদে আলোচনা ও বিতর্ক হতে হবে। জাতির ট্যাক্স দেয়ার সক্ষমতা বিবেচনা করতে হবে। পরোক্ষ কর পুরোপুরি তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি আলোচনা-সমালোচনা হতে হবে গণমাধ্যমেও। মনে রাখতে হবে বাজেট মানে কেবল কিছু কল্পনার ফানুস উড়ানো কিংবা পরিসংখ্যান নয়। কারণ পরিসংখ্যান হচ্ছে নারীর বিকিনীর মতো– সে যা প্রকাশ করে তা গৌণ, যা ঢেকে রাখে সেটাই মুখ্য।

লেখক: সালাহউদ্দীন আহমদ বাবলু, গণমাধ্যমকর্মী।