৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ পতনের দিন ও সফল গণঅভ্যুত্থান

- আপডেট সময় : ০৩:১৯:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৫০৯ বার পড়া হয়েছে
আজ ইতিহাস-কাঁপানো ৫ আগষ্ট। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার দিন। গত বছরের এই দিনে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ১৫ বছরের লুটেরা স্বৈরশাসক- আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখে পতন হয় দুর্নীতিবাজ জালিম আওয়ামী লীগ সরকারের। একটি সফল অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয় দেশ। জনজীবনে নেমে আসে স্বস্তি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে পরিকল্পিতভাবে একে একে জনকল্যাণমূলক সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্র ধ্বংসের পাশাপাশি গুম-খুন, ব্যাংক লুট, ভিন্নমত দমন, গণমাধ্যম ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং ভোটাধিকার হরণসহ জনগণের সামাজিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ফ্যাসিষ্ট হয়ে ওঠে শেখ হাসিনা। ভারতের সহযোগিতায় একতরফা ভোট ছাড়াও দিনের ভোট রাতে করে পরপর তিন তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে দেড় দশক ক্ষমতা দখল করে রাখে।
জঙ্গী নাটক ও ব্যাপক দমন-পীড়নের ভয়ে শেখ হাসিনার দানবীয় সরকারের বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয় প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।
শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের বংশানুক্রমিক কোটাপ্রথা সরকার রহিত করলেও ২০২৪ সালের পয়লা জুলাই হাইকোর্ট আবার সেই কোটা পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। এতে আগুনে ঘী ঢালার মতো জ্বলে ওঠে দেশের শিক্ষাঙ্গন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারী-বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হয় অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা প্রতিরোধ আন্দোলন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়, তা শেষ পর্যন্ত সরকার উৎখাতের এক দফার আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি দমনে সরকার-প্রধানের নির্দেশে চলে পুলিশ-রেব ও দলীয় বাহিনীর অস্বাভাবিক বলপ্রয়োগ, পাখীহত্যার মতো গুলি করে হত্যা ও ব্যাপক ধড়পাকড়। রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদকে হত্যা ঘুরিয়ে দেয় আন্দোলনের মোড়। স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে সৃষ্টি হয় এক অভূতপর্ব গণজোয়ার।
শুরুতে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক থাকলেও পরে তা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ সারাদেশে।
আন্দোলনের গতিপথ যখন প্রতিদিন উত্তাল হতে থাকে, ফ্যাসিষ্ট হাসিনা শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া না মেনে বরং ব্যাঙ্গ করে তা নিষ্ক্রিয় করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পোড়ামাটি কর্মসূচি চালাবার নির্দেশ দেয়। ওয়াসিম, আবু সাঈদ, মুগ্ধরা পুলিশের গুলিতে একে একে শহীদ হতে থাকেন। সেই সাথে রাজপথে বাড়তে থাকে জনতার প্রতিরোধ। শিক্ষার্থীদের সাথে নেমে আসেন অভিভাবকরাও। ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ। গণতন্ত্রগামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নির্যাতিত নিপীড়িত জনসাধারণও প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন।
রাজধানী ঢাকার উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রীসহ বিভিন্ন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। একদিকে পুলিশের গুলি অন্যদিকে ছাত্র-জনতার পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ। বিভিন্ন থানা ঘেরাও শুরু হলে ভেঙ্গে পড়ে পুলিশের মনোবল। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের তথ্য মতে টানা ৩৬ দিনে প্রায় দেড় হাজার নিহত, আর আহত প্রায় ৪০ হাজার।
ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধে দীর্ঘ ১৫ বছরের জুলুম নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ অগ্নিস্ফুলিঙ্গে রূপ নিলে সেনাবাহিনী নেমে আসে জনতার সমর্থনে। দুর্নীতি লুটতরাজ আর অপশাসন থেকে ছাত্র-জনতা মুক্তি পেতে স্বৈরাচারের আখড়া গণভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়। অবশেষে আসে সেই ঐতিহাসিক দিন ৫ আগষ্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। অবসান হয় একনায়কতান্ত্রিক শাসনের। সব দম্ভ আর অহমিকা ভেঙ্গে চুর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বিজয় ঘটে গণতন্ত্রের। দেশের মানুষ শান্তির সুবাতাসে আবার প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে শুরু করে।