স্টারলিংকের খরচসহ জানুন খুঁটিনাটি

- আপডেট সময় : ০৪:৪৩:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
- / ১৫৫২ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে বিশ্বখ্যাত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক, যা দেশের টেলিকম খাতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে এনজিএসও (নন-জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট অরবিট) লাইসেন্সের গাইডলাইন তৈরি, অপারেটর আবেদন গ্রহণ ও প্রসেসিং এবং কমার্শিয়াল কার্যক্রম শুরু—সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ ইতিহাসে দ্রুততম রোলআউট হিসেবে নজির স্থাপন করেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মাত্র ৩০% মোবাইল টাওয়ারে ফাইবার সংযোগ আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টারনেট সরবরাহ করা হয়, যা কম ক্ষমতাসম্পন্ন ও ব্যান্ডউইথ সীমিত। স্টারলিংকের মাধ্যমে একমাত্র একটি সেটআপ বক্সের মাধ্যমে ৪৭,০০০ টাকায় গ্রামীণ উদ্যোক্তা নিজেই উচ্চগতির, লো লেটেন্সি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এর ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও রাজধানীর সমমানের ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাবে।
স্টারলিংকের সেবাটি উদ্যোক্তাবান্ধব করে তোলার জন্য এনজিএসও লাইসেন্সিং গাইডলাইন এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে একজন গ্রামীণ উদ্যোক্তা বা সমিতিভিত্তিক একাধিক ব্যক্তি যৌথভাবে সেটআপ বক্স কিনে, নিজের এলাকায় ওয়াইফাই রেঞ্জ (২০-৫০ মিটার) জুড়ে ইন্টারনেট বিতরণ করতে পারেন। কোনো ধরনের আইনি বাধা ছাড়াই তারা সেবাটি বিক্রি করতে পারবেন। সরকার এই খাতে মাইক্রোক্রেডিট, ইএমআই এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।
আবাসিক ভবন বা ফ্ল্যাট মালিকরা চাইলে যৌথভাবে সার্ভিসটি ব্যবহার করতে পারবেন। একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট মিলে স্টারলিংকের কানেকশন নিলে ব্যয় অনেকটাই ভাগ হয়ে পড়বে, ফলে মাসিক ব্যয় অনেকাংশে সহনীয় হয়ে উঠবে।
বর্তমানে স্টারলিংকের এককালীন সেটআপ খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭,০০০ টাকা এবং মাসিক সাবস্ক্রিপশন চার্জ ৪,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকার মধ্যে। সরকার দাবি করেছে, রিজিওনাল তুলনায় বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম সবচেয়ে কম, এমনকি শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডের তুলনাতেও।
নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে স্টারলিংককে বাংলাদেশে একটি লোকাল গেটওয়ে স্থাপন করতে বাধ্য করা হয়েছে। বর্তমানে গেটওয়ের টেস্ট রান চলমান এবং ৯০ দিনের মধ্যে গেটওয়ে ব্যবহার বাধ্যতামূলক হবে। এছাড়া ডিভাইস আমদানির ক্ষেত্রে রেট, ভ্যাট, ট্যাক্স এবং এনওসি ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকবে।
চীন-মার্কিন টেক দ্বন্দ্বের মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে—যে কোনও আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি, যেমন Amazon Kuiper, OneWeb (UK), Telesat বা চীনা GW, চাইলে তারা সমান সুযোগে বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারবে। সরকার প্রযুক্তিগত নিরপেক্ষতা বজায় রেখে শুধুমাত্র জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
সরকারি কোম্পানি সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে স্টারলিংকের কার্যক্রমের মধ্যে সরকারি স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
স্টারলিংকের আগমন দেশের ইন্টারনেট খাতে এক যুগান্তকারী মোড় ঘোরাতে যাচ্ছে। এই উদ্যোগ শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে একটি বড় ধাপ নয়, বরং শহর-গ্রামের ডিজিটাল বৈষম্য দূরীকরণেও একটি কার্যকর পদক্ষেপ। উদ্যোক্তা তৈরি, ইন্টারনেট ডেমোক্রেটাইজেশন এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশ এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।