০৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

সৌদিতে ফ্ল্যাটে গাজীপুরের দুই ভাই খুন

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৭:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / ১৫৫৮ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সৌদিতে আরবে দাম্মামের একটি ফ্ল্যাটে আপন দুই ভাই খুন হয়েছেন। বুধবার (২১ মে) দেশটির দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে সৌদি পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের খবর বুধবার রাতে গাজীপুরে তাদের পরিবারের কাছে এসে পৌঁছায়। এই খবরে শোকের মাতম চলছে গাজীপুর মহানগরীর উত্তর ভুরুলিয়ার লম্বরি বাড়িতে।

নিহত দুই ভাই হলেন- কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২)। তারা উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কামরুজ্জামান কাকন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরির খোঁজ করছিলেন। ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে জব ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন বাবা মোশারফ হোসেন লম্বরির কাছে। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি। পরে বাহার উদ্দিন ভালো বেতনে ছোট ছেলে সাগরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। রাজি হলে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি যায় সাগর। কিন্তু কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করায় হয় বাবা মোশরফ হোসেনের কাছে। ছেলের কথা ভেবে আরও ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দেয়। কানাডা পাঠানোর জন্য নেওয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত চাইলে বড় ছেলে কাকনসহ দুই ছেলেকে সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন। নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানার পর বাহার উদ্দিন কাকন ও সাগরের বাবা মোশারফ হোসেনকে উমরা ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার প্রস্তাব দেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সঙ্গে সৌদি আরব যান মোশারফ হোসেন।

এ সময় দুই ছেলেই জানান- তাদের খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। রাখা হয়েছে ছোট্ট ঘরে। ২২ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন। ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার একটি পলিথিন মোড়ানো ব্যাগ দিয়ে ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন মোশারফ হোসেনকে। ব্যাগে কি ছিল তিনি দেখেননি। সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে একটি পুটলি উদ্ধার করে। পরে পুটলি রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার উদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। এসেই ব্যাগে থাকা পুটলি ফেরত চান। ইমিগ্রেশন পুলিশ রেখে দিয়েছে জানালে পুটলিতে ১৩ লাখ টাকার স্বর্ণ ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেন। কয়েক দফা হুমকি দেন। বলেন, টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে।

এসব ঘটনায় তিনি নগরীর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সর্বশেষ ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে লোকজন এসে অস্ত্র উঁচিয়ে মোশারফকে খুঁজতে থাকে। জিম্মি করে মোশারফের বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেমকে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনার সময় মোশারফ বাড়িতে ছিলেন না। ৯৯৯ ফোন দিলে সদর থানা পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।

মোশারফ হোসেন জানান, দুই ছেলে ছাড়া তার আর কোনো সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়ে ছিলেন। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয় তার পরিবারের। বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের খবর দিয়েছে। পরে সৌদি দূতাবাসের মধ্যে জানতে পেরেছেন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবককে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে খুন করে থাকতে পারেন ধারণা মোশারফ হোসেনের। তিনি দ্রুত সন্তানদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, সৌদিতে দুই ভাই খুনের ঘটনাটি এক গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে জেনেছি। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে, আমাদের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা গুরুত্ব সহকারে করা হবে।

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সৌদিতে ফ্ল্যাটে গাজীপুরের দুই ভাই খুন

আপডেট সময় : ০৩:৩৭:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

সৌদিতে আরবে দাম্মামের একটি ফ্ল্যাটে আপন দুই ভাই খুন হয়েছেন। বুধবার (২১ মে) দেশটির দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে সৌদি পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের খবর বুধবার রাতে গাজীপুরে তাদের পরিবারের কাছে এসে পৌঁছায়। এই খবরে শোকের মাতম চলছে গাজীপুর মহানগরীর উত্তর ভুরুলিয়ার লম্বরি বাড়িতে।

নিহত দুই ভাই হলেন- কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২)। তারা উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কামরুজ্জামান কাকন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরির খোঁজ করছিলেন। ঢাকার নয়াপল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে জব ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন বাবা মোশারফ হোসেন লম্বরির কাছে। ৩ লাখ টাকা নিয়ে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি। পরে বাহার উদ্দিন ভালো বেতনে ছোট ছেলে সাগরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। রাজি হলে গত বছরের অক্টোবর মাসে সৌদি যায় সাগর। কিন্তু কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরও ৪ লাখ টাকা দাবি করায় হয় বাবা মোশরফ হোসেনের কাছে। ছেলের কথা ভেবে আরও ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ দেয়। কানাডা পাঠানোর জন্য নেওয়া ৩ লাখ টাকা ফেরত চাইলে বড় ছেলে কাকনসহ দুই ছেলেকে সৌদির মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন। নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন। বিষয়টি জানার পর বাহার উদ্দিন কাকন ও সাগরের বাবা মোশারফ হোসেনকে উমরা ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার প্রস্তাব দেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সঙ্গে সৌদি আরব যান মোশারফ হোসেন।

এ সময় দুই ছেলেই জানান- তাদের খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে। ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না। রাখা হয়েছে ছোট্ট ঘরে। ২২ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরেন। ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে থেকে যান বাহার। আসার সময় বাহার একটি পলিথিন মোড়ানো ব্যাগ দিয়ে ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন মোশারফ হোসেনকে। ব্যাগে কি ছিল তিনি দেখেননি। সৌদি বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে একটি পুটলি উদ্ধার করে। পরে পুটলি রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার উদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। এসেই ব্যাগে থাকা পুটলি ফেরত চান। ইমিগ্রেশন পুলিশ রেখে দিয়েছে জানালে পুটলিতে ১৩ লাখ টাকার স্বর্ণ ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেন। কয়েক দফা হুমকি দেন। বলেন, টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে।

এসব ঘটনায় তিনি নগরীর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সর্বশেষ ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে লোকজন এসে অস্ত্র উঁচিয়ে মোশারফকে খুঁজতে থাকে। জিম্মি করে মোশারফের বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেমকে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনার সময় মোশারফ বাড়িতে ছিলেন না। ৯৯৯ ফোন দিলে সদর থানা পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।

মোশারফ হোসেন জানান, দুই ছেলে ছাড়া তার আর কোনো সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়ে ছিলেন। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয় তার পরিবারের। বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের হত্যাকাণ্ডের খবর দিয়েছে। পরে সৌদি দূতাবাসের মধ্যে জানতে পেরেছেন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই। দুপুরের পর দরজার নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়তে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসি টিভি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামে বাংলাদেশি এক যুবককে পুলিশ শনাক্ত করেছে। তাকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে খুন করে থাকতে পারেন ধারণা মোশারফ হোসেনের। তিনি দ্রুত সন্তানদের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহায়তা কামনা করেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মেহেদী হাসান বলেন, সৌদিতে দুই ভাই খুনের ঘটনাটি এক গণমাধ্যমকর্মীর মাধ্যমে জেনেছি। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে, আমাদের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা গুরুত্ব সহকারে করা হবে।