বিদ্যুৎ খাতে ভারতের দাদাগিরি বন্ধ!

- আপডেট সময় : ০৭:১০:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
- / ১৯৪১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ এক অন্ধকার যুগ। গ্রামীণ জনপদের মানুষ একসময় বিদ্যুৎ দেখতো ঈদের নতুন জামার মতো—আসবে, আবার চলে যাবে। কয়েক ঘণ্টার আলোর জন্য দিনভর অপেক্ষা, ফ্রিজ চলতো না, হাসপাতাল, কলকারখানা হতো অচল। শুধু ঘাটতিই নয়, বিদ্যুৎখাত ছিল এক সময় ষড়যন্ত্রের আঁতুড়ঘর।
২০০৯ থেকে ২০২৪—প্রায় দেড় দশকজুড়ে একদিকে অব্যাহত সংকট, অন্যদিকে কোটি কোটি টাকার তথাকথিত কুইক রেন্টাল চুক্তি। ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ঘোষণা করছিলেন “ডিজিটাল বাংলাদেশ”। অথচ বাস্তবে দেশ চলছিল ভারতীয় বিদ্যুৎ লাইনের ওপর নির্ভর করে। ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম থেকে আসা বিদ্যুৎ কখনো হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেত, কখনো দাম হঠাৎ বেড়ে যেত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিদ্যুৎখাতে সেই সময়কার নীতি ছিল জাতীয় স্বার্থের নয়, বরং সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর উপযোগী। ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি দেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিকে একটি অনির্ভরযোগ্য চক্রে ফেলে দেয়। কূটনৈতিক ভাষায় একে বলা হয় “বিদ্যুৎ কূটনীতি”।
২০২৫ সালে দৃশ্যপট পাল্টে যায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তখন ইতিহাসের অংশ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবির্ভূত হন নতুন এক নেতৃত্ব—প্রফেসর ইউনূস। কোনো ঢাকঢোল ছাড়া তিনি বিদ্যুৎখাত পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন।
প্রথমেই বন্ধ করা হয় কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নবায়ন। এরপর নিজস্ব গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে মনোযোগ। পায়রা, রামপাল, মাতারবাড়ির মতো প্রকল্পগুলোতে বিদেশি কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ঠেকিয়ে দেশীয় প্রকৌশলী ও বিনিয়োগেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
আজ বাংলাদেশ নিজের চাহিদার ৯৫ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ নিজেই উৎপাদন করছে। ভারতের বিদ্যুৎ রপ্তানির ওপর নির্ভরতা যেখানে একসময় ছিল ২০ শতাংশের মতো, এখন তা নেমে এসেছে ৭-৮ শতাংশে। বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে দেশের ৯৭ শতাংশ এলাকায়। সীমান্তবর্তী অঞ্চল কুমিল্লা বা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যেখানে একসময় ভারতীয় গ্রিড ছিল সক্রিয়, এখন সে অঞ্চলগুলো চলছে বাংলাদেশের নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় ।
সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাও ইতোমধ্যে ৭০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই তা ২০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এই সাফল্যের মাঝেও নতুন এক নীরব উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ লবিতে। ভারতের তিনটি বড় কোম্পানি ঢাকার সঙ্গে পুনরায় আলোচনায় বসেছে। কম দামে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাব দিচ্ছে তারা। তাদের হঠাৎ ফিরে আসার আগ্রহের পেছনে কী উদ্দেশ্য?