ঢাকা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দুর্ণীতি; উন্নয়ন প্রকল্প স্থবির

- আপডেট সময় : ০৩:০৪:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৬৩১ বার পড়া হয়েছে
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, কাজ না করে অগ্রীম বিল প্রদান, চাঁদাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রকল্পের কাজে স্থবিরতা সৃষ্টির মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে ঢাকা জেলা এলজিইডির বেশিরভাগ উন্নয়ন কার্যক্রম কার্যত থমকে আছে।আর এসব অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দূর্ণীতি দমন কমিশন (দুদক)।
চাঁদাবাজি ও আর্থিক কেলেঙ্কারিঃ
গত ঈদুল-উল-ফিতরের আগে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুইয়ার নামে ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেছে এসএটিভি।
কাজ না করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোবাইল মেইনটেনেন্সের ৫০ লক্ষ টাকার সিংহভাগ আত্মসাৎঃ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোবাইল মেইনটেনেন্সের কাজ না করেই ৫০ লক্ষ টাকার সিংহভাগ আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই রাস্তার ছবি ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় আপলোড করে টাকা উত্তোলন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কাজ না করে নিজ ভাইয়ের নামে ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাৎঃ
নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়া তার আপন ভাই মো. শহিদুল ইসলাম (সুমন) এর ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে এলজিইডির দুইটি তালিকাভূক্তির লাইসেন্স করে ঢাকা জেলায় নিজে ব্যবসা শুরু করেছেন। একটি তার মেয়ের নামে মোহনা এন্টারপ্রাইজ এবং অন্যটি মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এক ব্যাক্তি একটি সংস্থায় একটি তালিকাভুক্তির লাইসেন্স করতে পারে। কিন্তু বাচ্চু মিয়া তার নিজের ভাইকে দুইটি তালিকাভুক্তির লাইসেন্স করে দিয়েছেন। সেই দুই লাইসেন্সের একটি মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের নামে বিনা দরপত্রে অফিস ভবন রক্ষনাবেক্ষনের কাজ দিয়ে এবং সে কাজ না করে প্রায় ৪৮.৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এবং তার মেয়ের নামের লাইসেন্স মোহনা এন্টারপ্রাইজের নামে ৩.৯৮ লাখ টাকার কাজ দিয়েছেন।
অফিসের বাইরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অনিয়মঃ
অনুসন্ধানে জানা যায়, অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়াকে অফিসে পাওয়া দুষ্কর। তবে দিনের বেলায় অফিস না করলেও সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অফিসে দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করেন। এছাড়াও দূর্ণদূর্ণীতি করেও নিজের চেয়ার টিকিয়ে রাখতে একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে নিয়মিত যাতায়াত করেন এই কর্মকর্তা।
কর্মস্থলে স্বেচ্ছাচারিতা ও হয়রানিঃ
বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে অফিসের স্টাফদের হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। তার অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী স্বেচ্ছায় ঢাকা জেলা এলজিইডি থেকে বদলি নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি অফিসের নিয়মিত কর্মচারীদের বাদ দিয়ে নিজের ভাড়া করা নিজস্ব লোক দিয়ে অফিস চালাচ্ছেন।
প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহার :
বাচ্চু মিয়া ২০২২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখ্য সচিবের কণ্ঠ নকল করে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে ফোন করে নেত্রকোণা জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পোস্টিং নিয়েছিলেন। দেড় মাস পর ঘটনা জানা জানি হলে তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়াও তার পূর্ববর্তী কর্মস্থল গাজীপুরের কাপাসিয়া, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে সহকর্মীদের সাথেও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। কাপাসিয়ায় ইউএনওকে বদলি করানো, ময়মনসিংহে নির্বাহী প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করা এবং কিশোরগঞ্জে উপজেলা প্রকৌশলীদের সঙ্গে ঝামেলা সৃষ্টির মতো ঘটনাও রয়েছে।
রাজনৈতিক রং বদলঃ
বাচ্চু মিয়ার মা একসময় জাতীয় পার্টির মহিলা নেত্রী ছিলেন। তখন তিনিও করতেন জাতীয় পার্টি। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে শুরু করেন বিএনপি। তারপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমরসমর্থক হয়ে যান। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালীন সময়ে ক্ষমতার দাপটে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নানা অপকর্ম করে বেড়ায়। ৫ আগষ্টের পর খোলস পাল্টে বিএনপি সেজে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় না আসলেও তার দাপটে এলজিইডি ঢাকা জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
দরপত্রে অনিয়মঃ
বাচ্চু মিয়া মাসের পর মাস ধরে দরপত্র মূল্যয়ন করেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি বৈধ ঠিকাদারদের কাজ না দিয়ে গায়ের জোরে প্রথম বৈধ নিম্নদরের ঠিকাদারকে বাদ দিয়ে তার পছন্দের ঠিকাদারদেরকে কাজ দেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার তার সাথে ঠিকাদারদের কথা কাটাকাটি হয়। সম্প্রতি উত্তরায় তিনটি স্কুলের দরপত্রে তিনটি প্যাকেজে নিম্নদরের ঠিকাদারদের কাজ না দিয়ে ৭-৮% উচ্চ দরের ঠিকাদারদের কাজ দেয়ার সুপারিশ করলে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী তিনটি প্যকেজেই পুনঃদরপত্রের আদেশ দেন।
এসব অভিযোগের বিষয় ঢাকা জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায় নি।