ঘুষ–দুর্নীতিতে ‘কোটিপতি’ প্রকৌশলী! এলজিইডির বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে দুদকে গুরুতর অভিযোগ

- আপডেট সময় : ০৬:১৪:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৬১১ বার পড়া হয়েছে
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এবং কর ফাঁকির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা দুদকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও লিখিত অভিযোগে উঠে এসেছে, বাচ্চু মিয়ার নামে-বেনামে ফ্ল্যাট, বাড়ি, জমি এবং বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। অভিযোগকারীরা মনে করেন, যদি নিরপেক্ষ এবং সঠিক তদন্ত হয়, তবে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা প্রকাশ পাবে।
২০২৫ সালের ৩০ জুলাই একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এনবিআর-এর একটি তদন্তে বাচ্চু মিয়ার নামসহ ৩০০ প্রকৌশলীর তালিকা চিহ্নিত হয়, যাদের বিরুদ্ধে আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এরপর ৬ আগস্ট মোহাম্মদ খাজা মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এরও আগে, ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে মো. শিকদার হোসেন নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, বাচ্চু মিয়া ‘বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ’-এর পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন সরকারি কাজে প্রভাব খাটাতেন এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে টেন্ডার, নিয়োগ ও প্রকল্প অনুমোদনে সুবিধা আদায় করতেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, তিনি অবৈধ টেন্ডার ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন। কেরানীগঞ্জের একাধিক সড়ক, ব্রিজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে কাজ না করেই সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
২০২৫ সালের ৯ এপ্রিল দৈনিক সংবাদ সারাবেলা-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নেত্রকোনায় কর্মরত অবস্থায় বাচ্চু মিয়া এক মন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করে বিভিন্ন দপ্তরে তদবির চালিয়েছেন। সেই সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তন করে নিজেকে বিএনপির কর্মী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারীদের তথ্য অনুযায়ী, বাচ্চু মিয়া ও তার পরিবারের নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ রয়েছে, যা তার সরকারি আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: উত্তরা সেক্টর-১১-এ স্ত্রী আসমা পারভীনের নামে কোটি টাকার ফ্ল্যাট, গাজীপুর সদর নিশাদনগরে বাড়ি, গাজীপুরের জয়দেবপুরে বাড়ি, পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় একটি প্লট
২০২২ সালে আসমা পারভীনের নামে নিবন্ধিত একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-গ-৩৫-২৯৫২), যার ঘোষিত মূল্য বাস্তব মূল্যের তুলনায় কম। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা একাধিক বেনামি গাড়ি ও ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা জমা থাকার তথ্যও অভিযোগে উল্লেখ আছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাচ্চু মিয়া নিষিদ্ধ ঘোষিত সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন এবং আর্থিক সহায়তা দেন। গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।
রাজনৈতিক পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলজিইডি তে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন, যা স্পষ্টভাবে প্রশাসনিক স্বচ্ছতার পরিপন্থী। তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে হামলার শিকার হন এসএটিভির সাংবাদিক। এছাড়াও তিনি বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দ্বারা হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করার জন্য।
বাচ্চু মিয়ার ছত্রছায়ায় তারই অধীনে এলজিইডির উচ্চমান সহকারী নজরুল ইসলাম চাকুরীর মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পরেও অবৈধভাবে কর্মরত আছেন এবং লাইসেন্স সংক্তান্ত যত অনিয়ম দূর্ণীতি আছে সে বিষয়ে বাচ্চু মিয়াকে সহযোগিতা করে আসছেন একইসাথে নিয়মবহির্ভূত ভাবে চালাচ্ছেন টেন্ডার বানিজ্য।
জানা গেছে যুব, ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেন কে কোটি কোটি টাকা দিয়ে এ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডগুলো দিনের পর দিন ধামাচাপা দিয়ে এসেছেন বাচ্চু মিয়া।
দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান- “আমরা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে চলছে তদন্ত। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবে না।”
এলজিইডি দেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা, যার বাজেট হাজার হাজার কোটি টাকা। বিগত এক দশকে এর প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বহুবার উঠেছে— টেন্ডার কারসাজি, প্রকল্প অনুমোদনে কমিশন, আঞ্চলিক রাজনীতি। বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে এই নতুন অভিযোগ সেই প্রবণতার সম্প্রসারণ মাত্র।
পাঠকের কাছে এখন প্রশ্ন একটাই— দুদক কতটা নিরপেক্ষভাবে এই অভিযোগের অনুসন্ধান করবে এবং সত্য উদঘাটিত হবে কি না? সরকারের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার দৃষ্টিকোণ থেকে এই ঘটনা পরবর্তী সময়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে। নজরে রয়েছে সংবাদমাধ্যমেরও।