খুলনার ডুমুরিয়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপর্যস্ত

- আপডেট সময় : ০৪:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৫০৮ বার পড়া হয়েছে
খুলনার ডুমুরিয়ায় দুই মাস ধরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তলিয়ে আছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্থানীয়রা, শুকনো জায়গার অভাবে রান্না ও দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৯ কোটি টাকার সবজি ও ৫০ কোটি টাকার মাছ নষ্ট হয়েছে। পানিবন্দি মানুষ ত্রাণ নয়, দ্রুত স্থায়ী সমাধান চান।
চারদিকে শুধু পানি আর পানি।যেন এক বিশাল নদীর বুকের ভেতরে আটকে পড়েছে গ্রামগুলো।এ বছরও অতিবৃষ্টিতে বিলডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া-ফুলতলার কমপক্ষে ১০ টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ লাখ মানুষ এখন পানির নিচে। জলবদ্ধতায় থই থই পানির ভেতর দিয়ে ডোঙ্গা নৌকায় নিয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একটি ভগ্নদশা বাড়ি প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল পরিত্যক্ত,এখানে মানুষের বসবাস নেই। কিন্তু ভেতরে গিয়ে দেখা মিলল ৬৫ বছর বয়সী তাজিয়া বেগমের।
কথা বলতে গিয়ে কণ্ঠে জমে থাকা কষ্টের ভার উজাড় করে দিলেন । তিনি জানান,স্বামী হারানোর পর তিন ছেলের সংসারে থাকতেন। জলবদ্ধতার কারণে ছেলেরা তাকে ছেড়ে চলে যায়। এখন তিনি একা গরু, হাঁস-মুরগি ও ভিটেমাটি পাহারা দিচ্ছেন। তার এই বেদনা লাখো পানিবন্দি মানুষের প্রতিচ্ছবি।
ডুমুরিয়া,একসময় যেটি ছিল সবজির ভাণ্ডার,আজ সেখানে শুধু পানির আর পানি।ক্ষেতে কোনো সবজির চিহ্ন নেই।কৃষকরা হাহাকার করছেন যে সবজি উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল,তার ছিটেফোঁটাও ঘরে তুলতে পারবেন না এবার। অন্যদিকে মাছের ঘের ভেসে যাওয়ায় মৎস্য চাষিরা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।
ডাকাতিয়া বিলের জলাবদ্ধতা প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে মানবসৃষ্ট। প্রভাবশালীরা খাল দখল করায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়েছে।রাস্তাঘাটে হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি,রান্নার জায়গার অভাব।ঘরের ভেতর কোমর পানি এবং পচা দুর্গন্ধময় পরিবেশে পরিবারগুলো মাচা করে মানবেতর জীবনযাপন করছে।তবুও তারা আশায় বুক বাঁধছে এই দুঃস্বপ্ন কেটে যাবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসন”প্রকল্প পরিবেশ ছাড়পত্র না পাওয়ায় ফাইলবন্দি।
খুলনা জেলা প্রশাসক বলছেন,জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যতক্ষণ পর্যন্ত খাল দখল আর অব্যবস্থাপনা চলতে থাকবে,ততদিন পর্যন্ত মুক্তি মিলবে না এই জলবদ্ধতার অভিশাপ থেকে বলছেন,সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।