কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দায়ের
- আপডেট সময় : ০৯:২৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৫৭১ বার পড়া হয়েছে
কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে সার আমদানির নামে সরকারি অর্থ লোপাট, নিম্নমানের ও ভেজাল সার আমদানি, লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি)’র মাধ্যমে অর্থ পাচার, সরকারি অর্থ লোপাট, দুর্নীতিসহ গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জি-টু-জি (সরকার থেকে সরকার) চুক্তির মাধ্যমে শুধু মাত্র সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকেই সার আমদানি করার কথা। কিন্তু এই নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিদেশি বেসরকারি ট্রেডিং কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি থেকে বড় ধরনের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে সার আমদানির অনুমতি দেওয়া, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিপাকে ফেলতে এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করতে সুকৌশলে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অ্যাজেন্ড বাস্তবায়ন করছে। অভিযোগ রয়েছে,একটি বিশেষ সিন্ডিকেট ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোঃ খোরশেদ আলমের যোগসাজশে দরপত্র প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে এবং সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ মূল্যে কাজ দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মোঃ মোবারক হোসেন নামে একজন ব্যবসায়ী কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগ পত্রে এই সব তথ্য পাওয়া গেছে।
দুদকে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রে জানা য়ায়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে রাষ্ট্রীয়ভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েবে জি টু জি’র মাধ্যমে সেই দেশের সরকারিভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে সার আমদানি করে থাকে। জিটুজির চুক্তি অনুযায়ী সেই দেশের বেসরকারি ভাবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা কোনো ট্রেডিং কোম্পানির নিকট থেকে কোনোভাবেই সার আমদানি করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু চায়না থেকে সার আমদানির জন্য বিগত ২০২৪ সালে চায়নার সাথে বিএডিসির স্বাক্ষরিত চুক্তিতে দুটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকলেও ২০২৫ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে চায়নার সকল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ রয়েছে। এতে নিম্নমানের ডিএপি সার আমদানি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দুটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্থলে একাধিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সার আমদানি করতে হলে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং গ্রহণ না করে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বিএডিসি কর্তৃক চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছে। চীনের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে মোট ৭টি লটে শিপমেন্টের জন্য নির্ধারিত শিডিউল ছিল ২৫ এপ্রিল থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ডিএপি সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কম থাকলেও উল্লিখিত সময়ে কোনো শিপমেন্ট করা হয়নি। পরবর্তীতে গত ২৫জুলাই আন্তর্জাতিক বাজারে ডিএপি সারের দাম যখন সর্বোচ্চ তখন থেকে শিপমেন্ট শুরু করে। এদিকে অক্টোবর মাসে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে যখন ডিএপি সারের দাম কমতে থাকে তখন একসাথে ৪টি লটের এপি সারের দাম নির্ধারণ করা হয় এবং নির্ধারিত লে-ক্যানের বাইরে ইচ্ছামতো জাহাজ লোড পোর্টে পাঠানো হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছর সার আমদানিতে অব্যবস্থাপনা, বিলম্ব, জি টু জির নামে কমিশন বাণিজ্যের কারণে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নিজেদের কমিশন বাণিজ্যের জন্য বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খোরশেদ আলমের নির্দেশে গত ২৪ মে চায়নার ইউনাইটেড সির্টিস ট্রেডিং কোং. লিমিটেড নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নিকট ১২.০০.০০০০,০৩৫.৪০.০২০.২৫-১০৮ নং স্মারকে টিএসপি, ডিএপি এবং অন্যান্য সার ক্রয়ের জন্যে প্রস্তাব পাঠায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আরেক দোসর কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। চায়নার ইউনাইটেড সির্টিস ট্রেডিং কোং. লিমিটেড নামক এই ট্রেডিং কোম্পানিটি মূলত স্পিয়ার পার্স, কাঠ ও প্লাস্টিক আইটেম প্রস্তুত ও সরবরাহ করে থাকে। সার আমদানির সঙ্গে ইউনাইটেড সির্টিস ট্রেডিং কোং. লিমিটেড কোনো সম্পর্কই নেই। এছাড়া জিটুজি চুক্তি হচ্ছে সরকার টু সরকারের চুক্তি। জিটুজি চুক্তির নামে এই ধরনের ট্রেডিং কোম্পানির কাছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার আমদানি প্রস্তাব প্রেরণ করা মানে উচ্চ মূল্যে কমিশন পাওয়া।
অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, চায়নায় তৃতীয় লটের জন্য নির্ধারিত লে-ক্যান ছিল ৯ থেকে ১৫ অক্টোবর। বিএডিসির সাথে চায়নার সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী লে-ক্যানের ২১ দিন আগেই অথ্যাৎ ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হওয়ার কথা থাকলেও বিএডিসি ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করে ফেলে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে প্রতি মে. টন ডিএপি সারের দাম ৭৬৮.৭৫ মার্কিন ডলার। বিএডিসি চুক্তিতে নির্ধারিত ফর্মুলা অনুযায়ী ডিএপি সারের মূল্য নির্ধারণ না করে ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে ৭৭২.৫০ মার্কিন ডলার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এই মূল্য জাহাজ ভাড়া ব্যতিত।
এছাড়া প্রতি মেট্রিকটন সার লোকার খরচ যোগ হবে আরো ১শ ডলার। এতে ৪৪ হাজার মে. টন ডিএপি সার আমদানিতে প্রতি মে. টন ১০৫ মার্কিন ডলার করে সরকারের প্রায় সাড়ে ৫৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। চুক্তিতে উল্লিখিত নির্ধারিত ফর্মুলার ছাড়া সারের দাম নির্ধারণের সুযোগ না থাকলেও এক্ষেত্রে বিএডিসি ও কৃষি মন্ত্রণালয় দুর্নীতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন গ্র্র্রহণ করে সরকারি অর্থ মানি লন্ডারিং করেছে। উক্ত লটের জাহাজ এখন পর্যন্ত লোড পোর্টে পৌঁছেনি। জাহাজ লোড পোর্টে পৌঁছানোর ২১ দিন আগেই ২ অক্টোবর তারিখে প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে তৃতীয় লটের মূল্য হওয়ার কথা ৭৫৬.২৫ মার্কিন ডলার। এই মূল্য জাহাজ ভাড়া ব্যতিত। এছাড়া প্রতি মেট্টিকটন সার লোকাল খরচ যোগ হবে আরো ১শ ডলার। এছাড়া তৃতীয় লটেও প্রতি মে. টন ১১৬.২৫ মার্কিন ডলার করে ৪৪ হাজার মে. টনে ৬৩ কোটি টাকা এলসির মাধ্যমে পাচার করে বিদেশে গ্রহণ করছে বিএডিসি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।












