ইশরাককে নিয়ে যে স্ট্যাটাস দিলো সারজিস

- আপডেট সময় : ০৫:৫৪:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
- / ১৬৬৪ বার পড়া হয়েছে
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ চলমান। টানা পঞ্চম দিনের মতো আজ সোমবার (১৯ মে) নগর ভবনে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইশরাক হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আজ ১৯ মে (সোমবার) বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সারজিস আলম বলেন, ‘ইশরাক ভাইকে আমি চিনতাম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে হিসেবে। যেদিন হাসিনার পুলিশের হাত থেকে বুক চিতিয়ে নিজের কর্মীকে ছিনিয়ে আনলেন সেদিন থেকে ইশরাক ভাইকে আমি তার পরিচয়ে চিনি, রাজনীতিবিদ হিসেবে চিনি। তার সঙ্গে একাধিকবার কথা হয়েছে। গতানুগতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কিংবা বাংলাদেশের পার্সপেক্টিভে বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের অন্য দশজন নেতার মতো গতানুগতিক চিন্তাধারার মনে হয়নি।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘তিনি (ইশরাক হোসেন) অনেক ক্ষেত্রেই সত্যটাকে অকপটে স্বীকার করেছেন, ইভেন সেটা দলের বক্তব্যের সঙ্গে না মিললেও। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে এই প্রজন্মের যারা আছেন, তাদের থেকে সময়ের, জনগণের এবং আমাদের প্রত্যাশাটা অন্যদের তুলনায় বেশি। ইশরাক ভাই তাদের মধ্যে অন্যতম।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বিএনপি তাদের জায়গা থেকে অসংখ্য বার বলেছে এবং এটাই সত্য যে, বিগত তিনটা জাতীয় নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচনগুলো ছিল একপাক্ষিক, প্রশ্নবিদ্ধ ও অবৈধ। যে নির্বাচন অবৈধ, সেই নির্বাচনের মেয়র আমি কীভাবে হতে চাই? সেটা কীভাবে বৈধ হয়? তাহলে তো সেই নির্বাচনকে আমি বৈধতা দিয়ে দিচ্ছি।’
সারজিস আলম আরো উল্লেখ করেন- ‘তাহলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে শুধু ইশরাক ভাই কেন, সব জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, ওয়ার্ড ও সংসদীয় আসনে সবাইকে তাদের জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। মেয়র হয়ে সাময়িক ক্ষমতার ব্যবহার করা, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা; এসবের দিকে তাকিয়ে সামান্য কয়েক দিনের জন্য একটা চেয়ারে বসে অবৈধ নির্বাচনগুলোকে ইশরাক ভাই যদি বৈধতা দেন, তাহলে এটি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে’,।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, তিনি তার গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তায় এই মাইলস্টোনগুলো ধীরে ধীরে অর্জন করে নিতে পারবেন। কিন্তু সাময়িক প্রাপ্তির আশায় অবৈধ নির্বাচনের সো-কল্ড বৈধ মেয়র হিসেবে বসে তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এত বড় একটি দাগ লাগাবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নেওয়া উচিত।’
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের এই মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘একটি বিষয় বিচারাধীন প্রক্রিয়ায় থাকাকালীন স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে দিয়ে নগর ভবনের সামনে এর চেয়ে কয়েকগুণ বড় বিক্ষোভ কিংবা অবস্থান কর্মসূচি এখন যেমন করছেন, আগামীতেও তিনি করতে পারবেন। সেই তুমুল জনপ্রিয়তা তার আছে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তাকে তিনি অপরাধের বৈধতা উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারেন না। তার সঙ্গে এটা যায় না।’
সারজিস আলম বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কথা চিন্তা করে না হোক অভ্যুত্থানের সামনের সারির আপসহীন একজন নেতৃত্ব ও যোদ্ধার কথা চিন্তা করে হলেও নিজের স্থানীয় কিছু কর্মীদের মাধ্যমে তিনি (ইশরাক হোসেন) আসিফ মাহমুদকে এভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করাতে পারেন না, অপমানিত করাতে পারেন না, গালিগালাজ করাতে পারেন না, বাবা-মা তুলে কথা বলাতে পারেন না। এটা কখনোই রাজনৈতিক শিষ্টাচারপন্থী না। পরোক্ষভাবে এই দায় তার ওপরেও বর্তায়।’
এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, ‘যারা আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি, তারাই যদি বিগত অবৈধ নির্বাচনগুলোকে বৈধতা দেওয়ার জন্য নিজেদের সক্ষমতার অপব্যবহার করে, তাহলে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় ঐতিহাসিক দায় তৈরি করবে। ইশরাক ভাই সেই দায় সারাজীবনের জন্য বহন করবেন কিনা, সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।’
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা তাকে ব্যক্তিত্বের আনকম্প্রোমাইজ (আপসহীন) জায়গা থেকে যে উচ্চতায় প্রত্যাশা করি, এসব গতানুগতিক কালচার পলিটিক্সের কারণে সেটা তিনি নির্দ্বিধায় হারাবেন। রাজনৈতিক দীর্ঘ পথচলার প্রারম্ভেই ক্ষমতার সঙ্গে নীতির নেগোসিয়েশন সাদেক হোসেন খোকার উত্তরসূরির মানায় না, ইশরাক ভাইয়ের মানায় না।’