ইরানের ইউরেনিয়াম গেল কোথায়?

- আপডেট সময় : ১০:১৫:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
- / ১৬১৭ বার পড়া হয়েছে
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে চালানো বিমান হামলায় ইরানের একাধিক প্রধান পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই হামলার মাধ্যমে তারা তেহরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে ‘চিরতরে পেছনে ঠেলে দিয়েছে’। তবে হামলার বাস্তব প্রভাব নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন প্রশ্ন।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ), এখনো তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর কোনো স্পষ্ট প্রমাণ পায়নি। এমনকি হামলার পরপরই আইএইএ’র একদল পর্যবেক্ষক তেহরানের নাতাঞ্জ, ফরদো ও আরাকের আশপাশে তেজস্ক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ করে জানায়— “তীব্র বিস্ফোরণের আলামত থাকলেও ইউরেনিয়াম বা অন্যান্য পারমাণবিক উপাদান ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়।”
তাহলে ইরানের ইউরেনিয়াম গেল কোথায়? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ইরান সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান হয়তো আগেভাগেই পারমাণবিক উপকরণগুলো গোপন নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে রেখেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি (ISIS) এক প্রতিবেদনে জানায়, “ইরান একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা হামলার সম্ভাবনা মাথায় রেখে ‘ডিসপারসড স্টোরেজ’ বা বিচ্ছিন্নভাবে ইউরেনিয়াম মজুত রাখে।”
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুযায়ী ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘বড় ধরনের ক্ষতি’ হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র অবকাঠামো ধ্বংস করলেই পুরো কর্মসূচি শেষ হয়ে যায় না। কারণ, প্রকৃত মূল্যবান সম্পদ হলো পরিশোধিত ইউরেনিয়াম এবং পারমাণবিক প্রযুক্তি-বিশেষজ্ঞরা। এদের ক্ষতি না হলে ইরান চাইলে ভবিষ্যতে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
পরমাণু বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ আলী রাজাই বলেন, “ইরান এর আগেও ২০১০ সালের সাইবার হামলার পর দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এবারও একই ধরনের পুনর্গঠন অসম্ভব নয়।”
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলাকে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার সূচনা হিসেবে অভিহিত করেছেন। রাশিয়া, চীন ও তুরস্কসহ একাধিক দেশ এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং ইরানের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
ইরানের ইউরেনিয়াম কোথায় গেছে, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো অস্পষ্ট। তবে এটুকু নিশ্চিত—যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা শুধু পরমাণু অবকাঠামো ধ্বংস করেছে, পুরো কর্মসূচিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি।
পারমাণবিক ইস্যুতে আগামী দিনগুলোতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন মোড় আসতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।