‘আম্পান’ বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্হান করছে

- আপডেট সময় : ০২:০৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ মে ২০২০
- / ১৫৬৭ বার পড়া হয়েছে
সুপার সাইক্লোন ‘আম্পান’ বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্হান করছে। এটি আজ সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘুর্ণিঝড়টি কাল ভোর থেকে উপকূলে আঘাত হানতে শুরু করবে জানিয়ে আবহাওয়া বিভাগ পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে।
এদিকে কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদ সংকেতে ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ও কক্সবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের। সকালে কক্সবাজার পৌরসভায় মেয়র মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় চিড়া, মুড়িসহ পর্যাপ্ত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, এরই মধ্যে ৫ শতাধিক সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খুলে দিয়ে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। জেলার ৫৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো অস্থায়ীভাবে মেরামতের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় এলাকার মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আজ সন্ধ্যার মধ্যে ঝুঁকিতে থাকা সব মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা হবে বলে জানিয়েছেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ.ন.ম আবুজর গিফারী। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে মাস্ক ও সাবানের ব্যবস্থাসহ আইসোলেসন রুমের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী,পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পয়েন্টের বেড়িবাধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় যে কোন মুহূর্তে প্লাবিত হয়ে যেতে পারে। আশাশুনি উপজেলায় সাইক্লোন আম্পানের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা, উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ পরিচালনায় সমন্বয় সভা হয়েছে। গেল রাতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের নীলডুমুর ১৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের কনফারেন্স রুমে সমন্বয় সভা হয়। এ সময় জেলা প্রশাসক জানান, জেলায় মোট আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ২৭২টি। এছাড়া নতুন আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে কালিগঞ্জে ৮৭টি। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৫ লাখ ২২ হাজার মানুষের।
করোনা দুর্যোগের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আম্ফান নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির বাসিন্দারা। সুগন্ধা ও বিষখালী নদীবেষ্টিত এ জেলার মানুষ আম্পান মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জোহর আলী জানান, এরই মধ্যে জেলার ২৭৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী মজুদ রাখা হয়েছে। বর্তমানে করোনার ত্রাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে, এর সাথে ত্রাণ সহায়তা আরো বাড়ানো হবে।
ভোলার উপকূলের বাসিন্দদের নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে মাইকিং করছে সিপিপি কর্মীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ইলিশাসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা মাইকিং করে তারা। এদিকে নদী ও সাগরের মাছধরা জেলেরা ফিরতে শুরু করেছে। ঘাটে নোঙ্গর করা হয়েছে শত শত জেলে নৌকা। জেলায় ৭ নাম্বার বিপদ সংকেত থাকায় সিপিপি উপকূলের মানুষ নিরাপদে আসতে শুরু করেছে।
ঘূর্নিঝড় আমফান মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ভোলার ২১ চরের ৩ লাখ বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ মোকাবিলার জন্য খুলনায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩৪৯টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক। এছাড়া খুলনা সিভিল সার্জন অফিস ৯টি উপজেলায় ১১৬টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে। সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস প্রোগ্রাম এর দুই হাজার ৪৬০ জন এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার এক হাজার ১০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকা কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার সব স্কুল-কলেজকে সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
যশোরে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতি রোধে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে যশোর জেলা প্রশাসন ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্যে উপজেলা পর্যায়ে টিম গঠন করা হয়েছে, প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে আম্ফান মোকাবিলায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিও তাদের টিম নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
নোয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় আমফান মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। মঙ্গলবার সকালে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি জাতীয় ব্যবস্থাপনা পর্ষদ সদস্য ও নোয়াখালী জেলা ইউনিটের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, সংস্থার পক্ষ থেকে আপদকালীন সময়ের জন্য নগদ তিন লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, একটন চিড়া, মুড়ি, দুইশ কেজি গুড়, পাঁচ হাজার বোতল বিশুদ্ধ পানি ও ১০ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ১০টি পিকআপ এবং শতাধিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্চাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূলীয় এলাকা সমূহে পর্যাপ্ত সংখ্যক ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, শুকনো খাবার ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানান, জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস।
সুপার সাইক্লোনে রূপ নেওয়া ‘আম্ফান’-এর প্রভাবে গোপালগঞ্জে দমকা হওয়ার সাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে এ দমকা হওয়ার সাথে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে বেকায়দায় পড়েছে দিন মজুরেরা। করোনার কারনে জেলা লকডাউন থাকার পর বৃষ্টিপাত হওযায় বাইরে যেত পারছেন না তারা। এদিকে সাইক্লোন ‘আম্ফান’-এর কারনে উঠতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হবার আশংকা করছে কষকেরা।