আগুগঞ্জ টোলপ্লাজায় পুলিশের চাঁদাবাজী ঘুষ দুর্নীতির আড্ডাখানা

- আপডেট সময় : ০৭:২০:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৫০৬ বার পড়া হয়েছে
আগুগঞ্জ টোলপ্লাজা যেন পুলিশের চাঁদাবাজী ঘুষ দুর্নীতির আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। কথিত আছে প্রতি মাসে অন্তত ৫ কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয় এই একটি পয়েন্ট থেকে। লক্ষ্য পুরণে জেলার সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আর হিংস্র পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব দেয়া হয় এই টোল প্লাজা ফাঁড়ি বা চেকপোস্টের। এই টাকার ভাগ যায় জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার পকেটেও। কয়েক বছর ধরে এমন দানবীয় আচরণের শিকার হয়ে আসছেন গণ ও পণ্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। যার সবশেষ শিকার হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান এসএ পরিবহণ। অনৈতিক সুবিধা আদায়ে ব্যার্থ হয়ে জিরার মতো বহুল প্রচলিত মশলাজাতীয় পণ্যকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দিয়েছে এসএ পরিবহনের দুই নিরিহ কর্মীকে।
ঢাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহাসড়কের আশুগঞ্জ ব্রিজের টোলবক্সের পাশে অবস্থিত টোলপ্লাজা পুলিশ ফাড়ি। স্থানীয়দের কাজে যা চাঁদাবাজদের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত। ব্রীজ পার হতে হলে ঠিক টোলের মতোই চাঁদা দিতে হয় ফাঁড়ির সদস্যদের। পণ্যপরিবহনের ক্ষেত্রে মালামালের ধরণ বুঝে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আর গণ পরিবহনের জন্য মাসে ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা গুনতে হয় মালিক ও শ্রমিকদের।
কেউ টাকা না দিলে গাড়িতে অবৈধ পণ্য আছে দাবি করে মামলা দিয়ে করা হয় হয়রানী। আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা। যার সবশেষ শিকার এসএ পরিবহনের একটি পার্সেলবাহী গাড়ি। গত ১৫ অক্টোবর সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা কাভার্ডভ্যানকে টোলপ্লাজায় আটকে দেয় পুলিশ। অস্ত্রের মুখে গাড়িটির ড্রাইভার হেলপারকে জিম্মি করে তল্লাসীর নামে অরক্ষিত মহাসড়কের ওপর তছনছ করা হয় গ্রাহকের বুকিং করা পার্সেলগুলো।
অবৈধ কোন পণ্য না পেয়ে প্রচলিত মশলা জিরাকে হাস্যকরভাবে অবৈধ উল্লেখ করে গাড়িটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় তারা। ১২ ঘন্টা পর কথিত অভিযানের বৈধতা দিতে উপজেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে ডেকে এনে ভুয়া টাক্সফোর্সের অভিযান সাজায় পুলিশ। খবর পেয়ে পণ্যের সপক্ষের ডকুমেন্টগুলো নিয়ে সিলেট থেকে আশুগঞ্জ থানায় আসেন প্রেরক। ডকুমেন্টগুলো বৈধ বলে স্বীকার করলেও এই ২০ বস্তা পণ্যের জন্য আলাদা ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি বলে ঠুনকো অজুহাতে পণ্যের মালিকসহ এস এ পরিবহনের নিরিহ গাড়ি চালক ও হেলপারকে হাজতে ঢুকিয়ে ফেলে পুলিশ সদস্যরা।
এসএ পরিবহণ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিনিয়ত আগুগঞ্জ টোলপ্লাজায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের দানবীয় আচরণের শিকার হলেও ভয়ে কেউ অভিযোগ করার সাহস পায় না। একমাত্র এসএ পরিবহনই পুলিশের এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে ইতিপুর্বেও সোচ্চার ছিল। তাদের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করেই তিনজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছিলো কয়েকমাস আগে। আর এই কারণেই বার বার পুলিশের অমানবিক আচরনের শিকার হচ্ছে নিরিহ কর্মীরা।
শুধু এসএ পরিবহনই নয় পুলিশের এমন অপেশাদার আচরণে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রাও।
ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। দানবীয় আচরণ বন্ধ না হলে টোল প্লাজা চেকপোস্টের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার হুশিয়ারিও দেন তারা।
জুয়া- মেঘনার বালু উত্তোলণ-ছিনতাই-মাদক এবং আইনের বিভিন্ন অপপ্রয়োগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত পুলিশের কাছে এসএস পরিবহনের কর্মী ও মালামালআটকের বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়া যায়নি কোনো সদুত্তর।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঠুনকো অজুহাতে দরিদ্র নিরিহ কর্মীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো জটিল মামলা দিয়ে হয়রানী করাটা মানবাধিবকারেরও সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। {এ ব্যাপারে কথা বলতে জেলা পুলিশ সুপার এহতাশামুল হকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।