৩০ বছর শিকল বন্ধী সাইফুল, বৃদ্ধা মায়ের ভিক্ষায় জুটছে খাবার

- আপডেট সময় : ০১:০৪:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৫২১ বার পড়া হয়েছে
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে অদ্ভুত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০ বছর ধরে লোহার শিকল বন্ধী অবস্থায় জীবন যাপন করছেন সাইফুল ইসলাম। নেই কোন সুস্থতার কোন লক্ষণ। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত সাইফুলের মা রহিমা বেগম স্বামীসহ জমিজমা হারিয়ে পথে ঘাটে ভিক্ষা করে জীবনযাপন করছেন।
১৯৮৮ সালের ২৯ মার্চ সাইফুল জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর থেকেই সাইফুল কথা ঠিকমতো বলতে পারতো না। ৭ বছর বয়স থেকে অন্য মানুষ দেখলেই বড় বড় করে চেয়ে থাকতো এবং মানুষ দেখলে তাদের খামচি ও কামড় দেওয়ার চেষ্টা করতো। এসব কাজে থেকে সাইফুলকে ফেরানো চেষ্টা করানো হয়। একসময় এলাকাবাসী ওর আচরণে ভয় পেতে শুরু করে। এলাকাবাসী ও নিজেদের রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে ৮ বছর বয়সে ১৯৯৫ সালে তাঁর পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে দেয়। যা এখনও শিকল বাঁধা অবস্থায় জীবনযাপন করছে। শিকল খুলে দিলেই বড় বড় চোখ করে মানুষের দিকে এগিয়ে যায়। প্রায় ২০ বছর আগে সাইফুলের বাবা বহর আলীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর সাইফুলের পুরো দায়িত্ব মা রহিমা বেগমের উপরে পড়ে। ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজের পিছনে ঘুরে ঘুরে রহিমা বেগম ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি। ডাক্তার কবিরাজ রোগ ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় পাবনা পাগলাগারদে পাঠানোর চিন্তা করে ছিলেন। পাগলাগারদে কীভাবে এবং কে নিয়ে যাবে সেই সিদ্ধান্তে পাগলাগারদে নেওয়া হয়নি। সরকার থেকে ছেলের নামে ২৫০০ এবং মায়ের নামে ১৮০০ টাকা ভাতা পান। সেটা দিয়ে তাদের সংসার চলে না। রহিমা ভিক্ষা ও অন্য মানুষের কাছ থেকে কিছু পেয়ে সংসারের খরচ কোন মতে চালাচ্ছেন। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসার খরচ চালাতে পারছেন না। ছেলে অসুস্থ ও ভূমিহীন থাকায় সাইফুলের মা রহিমা বেগম সরকারের দেওয়া বাড়িতে আছেন। সাইফুলকে শিকলে বন্দি অবস্থায় খাবার দেওয়া ও বিছানায় শোবার ব্যবস্থা আছে। গোসলের সময় শিকলবন্দি অবস্থায় গোসল করানো হয়। সকাল বেলায় মুখ ধোয়া কখনও হয় না। মানুষ দেখলেই বড় বড় চোখ করে চেয়ে থাকা। সাইফুলের আরও দুই ভাই রয়েছে। তবে তারা আলাদাভাবে সংসার করেন।এলাকাবাসীর সাহায্য ও সহযোগিতায় ওর মা ছেলে বেঁচে আছেন। তার চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন এলাকাবাসী।
সাইফুলের মা বলেন, জন্মের পর থেকেই এমন অবস্থা। স্বামী মারা যাওয়ার পর সাইফুলের সকল দায়িত্ব আমার উপরে আসে। বয়সের ভারে আমি ছেলের ভরণপোষণ ঠিকমতো করতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে যে ভাতা দেয়া হয়েছে তা খুবই কম। ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।