০৯:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বেসরকারি খাতে সার আমদানিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

এস. এ টিভি
  • আপডেট সময় : ০৪:৫৪:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৫০৯ বার পড়া হয়েছে
এস. এ টিভি সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ঘুষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। অভিযোগ উঠেছে টেন্ডারে অংশ গ্রহণ না করেই ভুয়া বা জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে বেসরকারিভাবে সার আমদানির জন্য আহুত দরপত্রের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নজিরবিহীন অনিয়মের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে দেশ ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়ম করে চলছে। তবুও দেখার কেউ নেই।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার নোটিশের কপি ও কার্যাদেশ পর্যালোচনাসহ একাধিক সূত্র ও বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সরকার নন-ইউরিয়া সার হিসেবে পরিচিত টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি আমদানির জন্য প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে মন্ত্রণালয়।
এবার সেটা করা হয়েছে তিন মাসেরও বেশি সময় পর। যেখানে এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে নন-ইউরিয়া সারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য গত ২৪ জুলাই একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়।

যেখানে টেন্ডার দাখিলের সময় দেওয়া হয় ৬ আগস্ট পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হতো। কিন্তু এবার সেই নিয়ম বদলে ফেলা হয়েছে। উলটো কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানিকারকদের একটি দর প্রস্তাব করে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য রাজি থাকলে গত ২১ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া জন্য আমদানিকারকদের সম্মতিপত্র চেয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম।

পরবর্তীতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য আমদানিকারকেরা রাজি হলে গত ২১ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া আমদানিকারকরা মন্ত্রণালয়ে সম্মতিপত্র চায় মন্ত্রণালয়।

আমদানিকারকদের নিকট থেকে সম্মতিপত্র গ্রহণ করার ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে কোন প্রকার নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে এবং সার আমদানি সংক্রান্ত পরিপত্র (ধারা ৮-গ) অনুযায়ী প্রাপ্ত দরের মধ্যে সর্ব নিম্ন দরের ক্রমানুসারে কার্যাদেশ প্রদান করার বিধান থাকলেও মন্ত্রণালয়ের বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গালী দেখিয়ে দরপত্রের প্রাপ্ত দরের বাইরে গিয়ে মনগড়াভাবে নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে মোঃ মামুনুর রশীদের দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০হাজার ম্রেট্রিক টন সার দুই ধরনের দরে (প্রতি টন ৮৪৮ ডলার এবং ৮৭৪ ডলার) সার আমদানির কার্যাদেশ প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম ও যুগ্ম সচিব মো. খোরশেদ আলম।

শুধু তাই নয়, একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মনগড়া ভারে একাধিক দরে সার সরবরাহ করার অনুমতি প্রদান করে। এর মধ্যে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০হাজার ম্রেট্রিক টন সার দুই ধরনের দরে (প্রতি টন ৮৪৮ ডলার এবং ৮৭৪ ডলার) আমদানির অনুমতি দিয়েছে। অথচ এই কোম্পানি মন্ত্রণালয়কে এই দরে কোনো প্রাইজ অফার করেনি।

বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং মন্ত্রণালয়কে যে প্রাইজ দিয়েছে তার থেকে অনেক বেশি দরে তাদেরকে আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়ম করে চলছেন। যেন দেখার কেউ নেই।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে একটিমাত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান এবং তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকেই সার আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়।

অপর প্রতিষ্ঠানসমূহ যারা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকে সম্মান জানিয়েছিল তাদেরকে সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়নি। বরং আরো সার আমদানির জন্য ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ পুনরায় আরেকটি দরপত্র আহ্বান করেছে। মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে এবং অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কর্তৃপক্ষ নজিরবিহীন এই কাজ করেছে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত এই নজিরবিহীন কাজে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।

টেন্ডারের সর্বনিম্ন দরদাতার দরের বাইরে গিয়ে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে বিধি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী ফ্যাসিস্টের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়না দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে সংকটে ফেলে বাজারে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টির গভীর চক্রান্ত করা হয়েছে। এছাড়া দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মোঃ মামুনুর রশীদ গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে মিশরের একজন একজন ঠিকাদার কে ফোন করে বাংলাদেশের মন্ত্রনালয়ের টেন্ডার আমি নিয়নতন করি । তুমি যদি আমার সাথে চুক্তি না করো তাহলে বাংলাদেশে তুমি কোন সার সরবরাহ করতে পারবেনা।

এ বিষয়ে এবং কি ভাবে তার একক তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছেন সে বিষয়ে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মোঃ মামুনুর রশীদ কে ফোন করা হলে তিনি বলেন আমি কাজ কি ভাবে পেয়েছি মন্ত্রণালয় থেকে জেনে নিন। আমি কিছুই বলবো না । দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে আমদানির অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়মের ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুবই উদ্বেগজনক।

যদি এমনটি হয়ে থাকে, একই এস্টিমেট দিয়ে রাতের আঁধারে একটি কোম্পানিকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ঘটনা ঘটে তবে সেটা তদন্ত করা উচিত। প্রয়োজনে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা উচিত। পরিবর্তন দরকার। আগের সিস্টেমে যদি অনিয়ম হয় তা দুঃখজনক। সবকিছুতে জবাবদিহি থাকা উচিত। লটারিং সিস্টেম থাকা সত্বেও তা না মানার বিষয়টিও আমাদের ভাবায় যে সেখানে কি পরিমাণ আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। আর্থিক অনিয়ম ও মানি লন্ডারিংয়ে সাথে যারা জড়িত তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

উল্লেখ্য যে, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর ও বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য এবং সার আমদানির অনিয়মের সাথে জড়িত জড়িত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এমদাদউল্লাহ মিয়ান, সাবেক আইন প্রতিমমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের একান্ত সচিব এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম, বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের একনিষ্ঠ সহযোগী ও ভৈরবের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বতর্মানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খোরশেদ আলম এবং সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের একান্ত সচিব ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উপসচিব মনিরুজ্জামান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মো. মামুনুর রশীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে চাইলে তিনি বলেন, টেন্ডারের বিষয়ে আপনার কিছু জানার থাকলে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানাবে আমি কীভাবে পেলাম । আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ কথা বলতে পারব না বলেই মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।

এসব বিষয়ে জানতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে একাধিকবার মোবাইলে কল করা হলে তারা কেউ ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এস. এ টিভি সমন্ধে

SATV (South Asian Television) is a privately owned ‘infotainment’ television channel in Bangladesh. It is the first ever station in Bangladesh using both HD and 3G Technology. The channel is owned by SA Group, one of the largest transportation and real estate groups of the country. SATV is the first channel to bring ‘Idol’ franchise in Bangladesh through Bangladeshi Idol.

যোগাযোগ

বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২,
বাংলাদেশ।
ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০
ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪
ই-মেইল: info@satv.tv
ওয়েবসাইট: www.satv.tv

© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত ২০১৩-২০২৩। বাড়ী ৪৭, রাস্তা ১১৬, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ। ফোন: +৮৮ ০২ ৯৮৯৪৫০০, ফ্যাক্স: +৮৮ ০২ ৯৮৯৫২৩৪

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

বেসরকারি খাতে সার আমদানিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৪:৫৪:৩৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও ঘুষের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। অভিযোগ উঠেছে টেন্ডারে অংশ গ্রহণ না করেই ভুয়া বা জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে বেসরকারিভাবে সার আমদানির জন্য আহুত দরপত্রের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নজিরবিহীন অনিয়মের মাধ্যমে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে দেশ ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়ম করে চলছে। তবুও দেখার কেউ নেই।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার নোটিশের কপি ও কার্যাদেশ পর্যালোচনাসহ একাধিক সূত্র ও বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সরকার নন-ইউরিয়া সার হিসেবে পরিচিত টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি আমদানির জন্য প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে মন্ত্রণালয়।
এবার সেটা করা হয়েছে তিন মাসেরও বেশি সময় পর। যেখানে এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে নন-ইউরিয়া সারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য গত ২৪ জুলাই একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়।

যেখানে টেন্ডার দাখিলের সময় দেওয়া হয় ৬ আগস্ট পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হতো। কিন্তু এবার সেই নিয়ম বদলে ফেলা হয়েছে। উলটো কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানিকারকদের একটি দর প্রস্তাব করে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য রাজি থাকলে গত ২১ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া জন্য আমদানিকারকদের সম্মতিপত্র চেয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম।

পরবর্তীতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য আমদানিকারকেরা রাজি হলে গত ২১ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া আমদানিকারকরা মন্ত্রণালয়ে সম্মতিপত্র চায় মন্ত্রণালয়।

আমদানিকারকদের নিকট থেকে সম্মতিপত্র গ্রহণ করার ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে কোন প্রকার নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে এবং সার আমদানি সংক্রান্ত পরিপত্র (ধারা ৮-গ) অনুযায়ী প্রাপ্ত দরের মধ্যে সর্ব নিম্ন দরের ক্রমানুসারে কার্যাদেশ প্রদান করার বিধান থাকলেও মন্ত্রণালয়ের বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গালী দেখিয়ে দরপত্রের প্রাপ্ত দরের বাইরে গিয়ে মনগড়াভাবে নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে মোঃ মামুনুর রশীদের দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০হাজার ম্রেট্রিক টন সার দুই ধরনের দরে (প্রতি টন ৮৪৮ ডলার এবং ৮৭৪ ডলার) সার আমদানির কার্যাদেশ প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম ও যুগ্ম সচিব মো. খোরশেদ আলম।

শুধু তাই নয়, একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মনগড়া ভারে একাধিক দরে সার সরবরাহ করার অনুমতি প্রদান করে। এর মধ্যে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং নামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০হাজার ম্রেট্রিক টন সার দুই ধরনের দরে (প্রতি টন ৮৪৮ ডলার এবং ৮৭৪ ডলার) আমদানির অনুমতি দিয়েছে। অথচ এই কোম্পানি মন্ত্রণালয়কে এই দরে কোনো প্রাইজ অফার করেনি।

বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিং মন্ত্রণালয়কে যে প্রাইজ দিয়েছে তার থেকে অনেক বেশি দরে তাদেরকে আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়ম করে চলছেন। যেন দেখার কেউ নেই।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে একটিমাত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান এবং তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকেই সার আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়।

অপর প্রতিষ্ঠানসমূহ যারা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকে সম্মান জানিয়েছিল তাদেরকে সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়নি। বরং আরো সার আমদানির জন্য ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ পুনরায় আরেকটি দরপত্র আহ্বান করেছে। মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে এবং অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কর্তৃপক্ষ নজিরবিহীন এই কাজ করেছে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত এই নজিরবিহীন কাজে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।

টেন্ডারের সর্বনিম্ন দরদাতার দরের বাইরে গিয়ে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে বিধি লঙ্ঘন করে দুর্নীতি করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী ফ্যাসিস্টের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়না দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে সংকটে ফেলে বাজারে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টির গভীর চক্রান্ত করা হয়েছে। এছাড়া দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মোঃ মামুনুর রশীদ গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে মিশরের একজন একজন ঠিকাদার কে ফোন করে বাংলাদেশের মন্ত্রনালয়ের টেন্ডার আমি নিয়নতন করি । তুমি যদি আমার সাথে চুক্তি না করো তাহলে বাংলাদেশে তুমি কোন সার সরবরাহ করতে পারবেনা।

এ বিষয়ে এবং কি ভাবে তার একক তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছেন সে বিষয়ে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মোঃ মামুনুর রশীদ কে ফোন করা হলে তিনি বলেন আমি কাজ কি ভাবে পেয়েছি মন্ত্রণালয় থেকে জেনে নিন। আমি কিছুই বলবো না । দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে আমদানির অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতার সুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়মের ঘটনা ঘটিয়েছে তা খুবই উদ্বেগজনক।

যদি এমনটি হয়ে থাকে, একই এস্টিমেট দিয়ে রাতের আঁধারে একটি কোম্পানিকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ঘটনা ঘটে তবে সেটা তদন্ত করা উচিত। প্রয়োজনে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা উচিত। পরিবর্তন দরকার। আগের সিস্টেমে যদি অনিয়ম হয় তা দুঃখজনক। সবকিছুতে জবাবদিহি থাকা উচিত। লটারিং সিস্টেম থাকা সত্বেও তা না মানার বিষয়টিও আমাদের ভাবায় যে সেখানে কি পরিমাণ আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। আর্থিক অনিয়ম ও মানি লন্ডারিংয়ে সাথে যারা জড়িত তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

উল্লেখ্য যে, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর ও বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য এবং সার আমদানির অনিয়মের সাথে জড়িত জড়িত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এমদাদউল্লাহ মিয়ান, সাবেক আইন প্রতিমমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের একান্ত সচিব এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম, বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের একনিষ্ঠ সহযোগী ও ভৈরবের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বতর্মানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খোরশেদ আলম এবং সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের একান্ত সচিব ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উপসচিব মনিরুজ্জামান।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মো. মামুনুর রশীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে চাইলে তিনি বলেন, টেন্ডারের বিষয়ে আপনার কিছু জানার থাকলে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানাবে আমি কীভাবে পেলাম । আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ কথা বলতে পারব না বলেই মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।

এসব বিষয়ে জানতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে একাধিকবার মোবাইলে কল করা হলে তারা কেউ ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।