ঢাকা এলজিইডির দুর্নীতির একক রাজা বাচ্চু মিয়া

- আপডেট সময় : ০২:৪৪:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
- / ১৮০৮ বার পড়া হয়েছে
বাচ্চু মিয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঢাকা জেলার শুধু নির্বাহী প্রকৌশলী নয় বরং প্রতিষ্ঠানটির দুর্ণীতির একক রাজা হিসেবে পরিচিত তিনি। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশি মতো চলেন এই রাজা।শুধু তাই নয় আর্থিক অনিয়মের তুঘলকি কাণ্ড রয়েছে এই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।
উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে ঠিকাদারদের কাছে চাঁদা আদায়, আপন ভাইয়ের নামে ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে এলজইডিতে ঠিকাদারি লাইসেন্স করে কাজ ভাগিয়ে নেয়া, উন্নয়ন প্রকল্পে দূর্ণীতি, নিজের খেয়াল মতো অফিসে আসা, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই কাজ সম্পূর্ণ দেখিয়ে বিল দিয়ে দেয়া সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে এই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। আর এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী ঠিকাদার সহ জেলা এলজিইডি কার্যালয়ের কর্মকর্তা- কর্মচারীও তাঁর ভয়ে তটস্থ থাকে।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নাম ভাঙিয়ে ঠিকাদারদের কাছে ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে ৪০ লক্ষ টাকা নেয়ার অভিযোগ নিয়ে মাঠে নামে এসএটিভি।
গোপন ক্যামেরার সামনে ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপদেষ্টার নামে নির্বাহী প্রকৌশলীর সেই ৪০ লক্ষ টাকা নেয়ার ঘটনা অকপটে জানান। ভুক্তভোগী ঠিকাদারের দাবি এলজিইডিতে টাকা ছাড়া কেউ কাজ করতে পারে না এবং নির্বাহী প্রকৌশলি যখন যা দাবি করেন তখন তাই দিতে হয়।
জেলা এলজিইডিতে কাজ করা ভুক্তভোগী আরেক ঠিকাদার বিপ্লব মিয়া বলেন, এসব দূর্ণীতি নিয়ে কথা বলে লাভ নাই। সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে বন্ধ করে দেন তিনি
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকা শহর ও পূর্বাচলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প (দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প) এর আওতাধীন ঢাকার মিরপুরে গাবতলী জিপিএস-এর ৬ তলা ভিত্তিসহ ৬ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্পে নির্মাণকাজ সম্পন্ন না করেও অতিরিক্ত বিল পরিশোধের অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে নবাবগঞ্জের বান্দুরায় ইছামতী নদীর উপর নির্মিতব্য ২৭০ মিটার ব্রিজের ৯টি স্প্যানের মধ্যে ৮টির কাজ শেষ হলেও আর্চ স্প্যানের কাজ এখনো বাকি রয়েছে। কিন্তু অফিসের রেকর্ডে ৯৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে প্রায় ৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করা হয়েছে । এদিকে তাঁর এসব দূর্ণীতির বিষয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযান পরিচালনা করে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে বলেও জানিয়েছে দুদক।
এছাড়ও নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়া তাঁর ভাই ভাই শহিদুল ইসলাম (সুমন)-এর একটি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে এলজিইডিতে দুইটি তালিকাভূক্তির লাইসেন্স করেছে। একটি তার মেয়ের নামে মোহনা এন্টারপ্রাইজ এবং অন্যটি মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী একটি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে একটি সংস্থায় একটি নামে তালিকাভুক্তির লাইসেন্স করা যায়। কিন্তু বাচ্চু মিয়া তার নিজের ভাইকে একটি ট্রেড লাইসেন্সের বিপরীতে দুইটি তালিকাভুক্তির লাইসেন্স করে দিয়েছেন। সেই দুই লাইসেন্সের একটি মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের নামে বিনা দরপত্রে অফিস ভবন রক্ষনাবেক্ষনের কাজ দিয়ে এবং সে কাজ না করে প্রায় ৪৮.৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে এসব দূর্ণীতি ও অনিয়মের অনুসন্ধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঁধার মুখে পড়েন এসএটিভির প্রতিনিধি হাসান আল সাকিব । নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মূল ফটকের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা বাচ্চুর মিয়ার নির্দেশে এসএটিভির প্রতিনিধির উপর হামলা করে জোর করে ক্যামেরা থেকে ভিডিও ডিলিট করান এছাড়াও শারীরিক ভাবে হেনস্তা করেন। পরে এঘটনায় অভিযুক্ত দুই আনসার সদস্য সাকলাইন এবং তৌহিদুলকে প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে বাচ্চু মিয়া ২০২২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কণ্ঠ নকল করে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীকে ফোন করে নেত্রকোণা জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পোস্টিং নিয়েছিলেন। দেড় মাস পর ঘটনা জানাজানি হলে তাকে সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
তবে উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে টাকা নেয়ার ঘটনা অস্বীকার করে অভিযুক্ত ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী বাচ্চু মিয়া বলেন, আমি একটি দলের আদর্শ ধারণ করি একারণে আমার বিরুদ্ধে এলজিইডির কয়েকজন ফ্যাসিস্ট কর্মকর্তা লেগেছেন।