এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমালের হিসাব জব্দ
- আপডেট সময় : ০৪:০৭:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
- / ১৮৮২ বার পড়া হয়েছে
গত ৮ বছরে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা পাচার, ব্যাংক দখল, ঋণ জালিয়াতি, শেয়ার কারসাজি, নামে-বেনামে ভুয়া কোম্পানি বানানো ব্যাংকের টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়া– এতসব অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনি এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল। গত ৮ বছর শেখ হাসিনার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে নিজেকে মনে করতেন সবকিছুর উর্ধ্বে। হাসিনার আর্থিক সাম্রাজ্যে শত কোটি টাকার যোগান দেয়া এবং জুলাই বিপ্লবে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামীও তিনি। এসব কারণে ইতোমধ্যে পারভেজসহ তিন জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
২০১৩ সালে স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনামলে প্রবাসী উদ্যোক্তাদের নামে এনআরবিসি ব্যাংকের যাত্রা শুরু হলেও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফরাসত আলী ও ভাইস চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী ব্যাংকটির লাইসেন্স নেয়ার পর থেকেই লিপ্ত হন ব্যাপক চাঁদাবাজিতে। তখন ব্যাংকটির প্রাথমিক শেয়ার বিক্রিতে ব্যাপক অনিয়ম আর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল আহসান চক্রের সাথে লিপ্ত হয়ে ব্যাংকের অর্থ লোপাটসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ফরাসত আলী-তৌফিক চৌধুরীসহ ৬ পরিচালককে অপসারণ করে।
যার পেছনে মূলত কলকাঠি নেড়েছিলো ২০১৭ সালে নিয়োগ পাওয়া রাশিয়া-ফেরত বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম, ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম মিয়া আরজুসহ বর্তমান বোর্ডেরই সুবিধাবাদী চক্র। এরপর যেন আলাদিনের আশ্চর্য চেরাগ এসে যায় তমালের হাতে! শুরু হয়ে যায় ব্যাংকটির সীমাহীন লুটপাট, অনিয়ম আর নৈরাজ্যের নতুন নতুন উপাখ্যান।
গত ৮ বছর ধরে গণমাধ্যমের লালকালো শিরোনাম বলছে অপ্রতিরোধ্য তমালের অনিয়ম-দুর্নীতি কতটা লাগামহীন ছিল। একপ্রকার রাহুর গ্রাসে পরিণত হয় বেসরকারী ব্যাংকটি। কারণ একটাই- ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে সবই তার কাছে ছিল তুচ্ছ।
তমালের দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে ডুব দেয়ার আগে ছাত্রজনতার জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে পতিত হাসিনার ফ্যাসিজম বাস্তবায়নে কিভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন সেই কাহিনীতে নজর রাখা যাক। জুলাইয়ের ১৭ তারিখ পারভেজ তমাল এক অফিস আদেশ জারি করেন, যেখানে বলা হয় ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা বা পরিবার যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া জুলাই মাসে ছাত্রদের আন্দোলন প্রতিহত করতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে মোটা অংকের টাকা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে শাহবাগ থানায় হত্যা মামলাও হয়েছে তমালের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে তদন্ত।
পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে গণহত্যায় জড়িত পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া জরুরী বলে জানান টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানান, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমালের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগগুলোর তদন্ত চলছে। যা গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এসএম পারভেজ তমাল, ইসি কমিটির চেয়ারম্যান আদনান ইমাম, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জাফর ইকবাল হাওলাদারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বিষয়গুলো নিয়ে চেয়ারম্যান-এমডির সাথে যোগাযোগের জন্য ব্যাংকে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে কর্মকর্তারা জানান মামলা হওয়ার পর থেকে তারা আর ব্যাংকে আসেন না।















