আড়াইশ বছরের পুরোনো মসজিদ এখন ধ্বংসের পথে

- আপডেট সময় : ০৪:১৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৫১১ বার পড়া হয়েছে
আড়াইশ বছরের বেশি পুরোনো বাইজি নূর জাহানের মসজিদ। কুমিল্লা সদর উপজেলার গোমতী নদীর উত্তর তীর ঘেঁষা মাঝিগাছা-নন্দীর বাজার সড়ক ও বেড়িবাঁধের সংযোগস্থলে কালের সাক্ষী মসজিদটি এখন ধ্বংসের পথে। বেহাত হয়েছে মসজিদের জায়গা। দাবি উঠেছে, সংরক্ষণ, প্রত্নতত্ত্ব ঘোষণার। মসজিদ ঘিরে মাঝিগাছা এলাকায় লোকজনের মুখে নানা কথা রয়েছে। এই মসজিদে কখনো আজান হয়নি, নামাজও পড়েনি কেউ।
মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন ত্রিপুরা মহারাজার রাজদরবারের শ্রেষ্ঠ বাইজি নূর জাহান।এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল তৎকালীন ত্রিপুরার রাজা ২য় ধর্ম-মানিক্যের শাসন আমল ১৭১৪-১৭৩৪ সালের মাঝে। গ্রামে ফিরে নিজেকে জমিদারের বিধবা স্ত্রী পরিচয় দেন নূর জাহান। দরিদ্র মানুষের সাহায্য করতেন নিয়মিত। তার অতীত জীবনের জন্য ছিল গভীর অনুশোচনা। এক হুজুরের পরামর্শে পাপমোচনের আশায় মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন।
এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হয়। নির্ধারিত হয় প্রথম নামাজের দিন। হুজুর নিজেই ইমামতি করবেন, এই আশ্বাসে সবাই প্রস্তুত। কিন্তু নামাজের আগে হুজুর যখন মসজিদ নির্মাণের পেছনের গল্প বলেন এবং নূর জাহানের অতীত পরিচয় প্রকাশ করেন, তখন উপস্থিত মুসল্লিরা একসঙ্গে বলে ওঠেন, এটি তো নটী বিবি’র মসজিদ, এখানে নামাজ পড়া যাবে না! সেই দিন থেকে আর কোনো আজান হয়নি, হয়নি কোনো নামাজ।তবে পরিত্যক্ত মসজিদটির প্রাচীনতত্ত্ব এখনো অটুট রয়েছে।
সুশীল সমাজের মতে এই মসজিদটিকে আরও আগেই সংস্কার ও সংরক্ষণ করা উচিত ছিলো।
এদিকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালকের নির্দেশে একটি টিম মসজিদটি পরিদর্শন করেছে। মসজিদটি সংরক্ষণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন বলে জানান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা ।
সামাজিক প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেন নূর জাহান। তাকে দাফন করা হয় মসজিদের পাশেই। বটগাছের শেকড়ে জড়ানো সেই মসজিদ এখনো দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। লোকমুখে মসজিদটি পরিচিত ‘নটী বিবি’র মসজিদ’ নামে ।